বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১১

২১ শতকের এজেন্ডা = আবুল আসাদ



অস্তায়মান বিশ শতকের উপসংহার থেকেই গড়ে উঠবে একুশ শতকের যাত্রাপথতাই এই উপসংহারের স্বরূপ সন্ধান খুবই জরুরীআমেরিকান এক লেখক তার এক শতাব্দী-সিরিজ গ্রন্থে শতাব্দীর গবমধ ঞবহফগুলোকে তার মত করে চিহ্নিত করেছেনএই গবমধ বহফগুলোর মধ্য রয়েছে ঃ
              বিশ্ব অর্থনীতি
              বিশ্ব রাজনীতি
              বিশ্ব সংস্কৃতি

এই গবমধ ঞবহফগুলো বিশ শতাব্দীর অনন্য কারিগরি, বৈষয়িক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি এবং এই উন্নয়নের স্রোতে বহমান জাতিসংঘের অনন্য ভূমিকার দ্বারা প্রতিপালিত ও পরিচালিত হয়ে আগামী শতাব্দীর  সিংহদ্বারে এক বিশেষ রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছেএই রূপের নির্ণয়ই একবিংশ শতাব্দীর প্রকৃতিকে পরিস্কার করে দিতে পারে
প্রথমে বিশ্ব অর্থনীতির শতাব্দী শেষের গতি-প্রকৃতির প্রশ্ন আসেআশির দশকের শুরু পর্যন্ত বিশ্ব দুই অর্থনীতি- পুঁজিবাদ ও কম্যুনিজমের সংঘাতে সংুব্ধ ছিলকিন্তু তারপর মুক্তবাজার অর্থনীতির অপ্রতিরোধ্য গ্রাসে সমাজবাদী অর্থনীতির পতন শুরু হলোআশির দশকের সমাপ্তিতে এসে তা সমাপ্তও হয়ে গেলআজ মুক্তবাজার অর্থনীতির গ্রাসে গোটা পৃথিবীমুক্ত বাজার অর্থনীতির মুল কথা হলো ঃ শক্তিমান অর্থনীতি বিজয় লাভ করবে, পরাজিত হবে দুর্বল অর্থনীতিএই পরাজয়ের ভয় দুর্বল অর্থনীতিকে সবল করে তুলবে এবং সেও উন্নীত হবে বিজয়ীর আসনেতাই সবাইকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির স্রোতে নির্ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবেএই তত্ত্ব কথায় উল্লিখিত আইডিয়াল সিশুয়েশনহয়তো কোনদিন আসবে কিংবা আসবেই নাতবে তার আগেই শক্তিমান অর্থনীতির করাল গ্রাসে আত্মরার অধিকারহীন দুর্বল অর্থনীতি পরাধীন হয়ে মরার মত বেঁচে থাকার পর্যায়ে চলে যাবেযেমন আমাদের বাংলাদেশ মুক্ত বাজার অর্থনীতি গলাধঃকরণ করে ইতোমধ্যেই বিদেশী পণ্য বিশেষ করে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছেএই অবস্থায় বাজার না পাবার আশংকায় বিদেশী বিনিয়োগ এখানে আসবেনা বরং তা যাবে বাজার দখলকারী দেশের পুঁজিপতিদের কাছেযাওয়া শুরু হয়েছেযে বিদেশী বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার কথা ছিল তা গিয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেএর অন্যথা না ঘটলে অব্যাহত এই প্রবনতা বাংলাদেশকে শিল্প পণ্যের ক্রেতা এবং কৃষিপণ্যের বিক্রেতায় রূপান্তরিত করবে
বলা হচ্ছে, এই বিনাশ হতে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে  ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন’ (ড.ঞ.ঙ)কিন্তু জাতিসংঘের মত এই সংস্থাও শক্তিমানদের দ্বারা পরিচালিত এবং শক্তিমান অর্থনীতিরই স্বার্থ পুরা করবেশুধু তাই নয়, এই সংস্থা মুক্তবাজার বাণিজ্যের বিশ্বনিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মরায় উদ্বুদ্ধ দুর্বল অর্থনীতির বেয়াড়াপনাকে শায়েস্তা করার জন্য বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করতে পারবে হয়তো মহানমুক্তবাজার অর্থনীতির মূল্যবান স্বার্থেই
মুক্তবাজার অর্থনীতির এই বিশ্বরূপ বিশ্বে একক অর্থনীতি গড়ার লইেযার নিয়ন্ত্রনে থাকবে আজকের শক্তিমান অর্থনীতিগুলো, আর শোষিত হবে অনুন্নত ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতির দেশসমূহআজকের বিশ্ব অর্থনীতির শতাব্দী শেষের এটাই প্রবণতা
এই প্রবণতা তার লে পৌঁছতে পারলে, একক এক বিশ্ব অর্থনীতি গড়া এবং তাকে এককেন্দ্রীক নিয়ন্ত্রনে আনার প্রয়াস সফল হলে বিশ্বের মানুষের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে তার অশুভ প্রভাব নেমে আসবে
অনুন্নত ও উন্নয়নমুখী মুসলিম অর্থনীতিগুলোর জন্য এটা একবিংশ শতাব্দীর প্রথম চ্যালেঞ্জ
বিশ শতকের দ্বিতীয় গবমধ ঞবহফহিসেবে আসে বিশ্ব রাজনীতির কথা
ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগুরিয়ান একটা বিশ্ব রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেনযার নেতৃত্ব দেবে ইহুদিরা এবং যার রাজধানী হবে জেরুজালেমতার স্বপ্নের ভবিষ্য আমি জানি না, তবে এক বিশ্ব অর্থনীতির মতই এক বিশ্ব রাষ্ট্র গড়ার ধীর ও ছদ্মবেশী প্রয়াস চলছেএই প্রয়াসে ছাতা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জাতিসংঘ এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গণতন্ত্রগণতন্ত্র জয় করেছে যেমন কম্যুনিষ্ট সাম্রাজ্য, তেমনি জয় করবে গোটা বিশ্ববিশেষ সংজ্ঞায়িত এ গণতন্ত্রের আদর্শের কাছে জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় অধিকারকে বলি দিতে বলা হচ্ছেবলি না দিলে শক্তি প্রয়াগেরও ব্যবস্থা রয়েছেগণতন্ত্রের স্বার্থ রার জন্যই হাইতিতে আন্তর্জাতিক বাহিনী নামানো হয়েছে জাতিসংঘের নেতৃত্বেএমন হাইতি ভবিষ্যতে আরও অনেক হতে পারে
গণতন্ত্র কিন্তু সমস্যা নয়, সমস্যা হলো গণতন্ত্রের অর্থ ও রক্তস্রোতের উপর তাদের বর্তমান যে রাষ্ট্রসংহতি গড়ে তুলেছে, সে রক্তস্রোত প্রবাহিত না হলে এবং সে সময় গণতন্ত্রের নীতি অনুসৃত হলে তাদের এই রাষ্ট্রসংহতি গড়ে উঠতো নাএমনকি রেড ইন্ডিয়ানদেরও একাধিক রাষ্ট্র সৃষ্টি হতোএই ইতিহাস তারা ভুলে গেছেযেমন আমাদের প্রতি এখন তাদের নসীহত, বিদ্রোহী শান্তি বাহিনীর গায়ে আমাদের হাত দেয়া যাবে নাতথাকথিত আদিবাসি বলে তাদের মাটিতে আমাদের পা দেয়া যাবেনাদেশের ভিতর কোন গ্রপ বা কোন ব্যক্তি যদি বিদেশী টাকার পুতুল সেজে ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে গলা টিপে মারতে চায়, তাহলেও গণতন্ত্রের আদর্শের স্বার্থে তাদের জামাই আদর দিয়ে যেতে হবে
গণতন্ত্রের দায়িত্বহীন এই আদর্শ অনুন্নত ও উন্নয়নমুখী এবং সমস্যা  পীড়িত দেশ ও জাতিকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ত-বিত এমনকি খন্ড-বিখন্ড করতে পারেঅন্তত আর কিছু না হোক বহু মত ও পথে  বিভক্ত এবং দুর্বলতো করবেইএ ধরনের দেশ ও জাতিকে তাদের স্বকীয় আদর্শ ও মূল্যবোধ থেকে অনায়াসেই সরিয়ে আনা যায় এবং তাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উপর বিদেশী নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা সহজ হয়
এর সাথে যুক্ত হয়েছে এনজিও প্রভাবএরা নামে নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনহলেও এদের সরকারি ভূমিকা ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠেছেএখনি এরা সরকারি বাজেটের একটা অংশ পাচ্ছেনিকট ভবিষ্যতে এরা সরকারের গোটা সার্ভিস ও উন্নয়ন সেক্টর পরিচালনার অধিকার পেয়ে যাচ্ছে  তখন আইন শৃংখলা ও দেশ রা ছাড়া সরকারের হাতে আর কিছুই থাকবে নাজাতিসংঘের অনুসৃত নীতি রাষ্ট্রসমুহের দেশ রা ব্যবস্থাকে সংকুচিত অথবা বিলোপ করে দিতে পারেজাতিসংঘ শান্তি রার কাজ অনেক আগেই শুরু করেছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজেও হাত দিয়েছেঅতএব জাতিসংঘ নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়ে সংগত কারণেই রাষ্ট্রসমুহকে দেশ রা বাহিনী খাতে খরচ বন্ধ করতে বলতে পারেসুতরাং সরকারের কাজ তখন হয়ে দাঁড়াবে শুধু শান্তি-শৃংখলা রা করা এবং সরকারের এই কাজও নিয়ন্ত্রিত হবে এনজিওদের দ্বারাকারণ এনজিওরা গোটা সার্ভিস ও উন্নয়ন সেক্টরের মালিক হওয়ার ফলে দেশের রাজনীতি তারাই নিয়ন্ত্রন করবেআর এনজিওরা, সবাই জানেন, আর্থিক ও আদর্শগত দিক থেকে মূলত জাতিসংঘ অথবা জাতিসংঘের পরিচালক শক্তিসমুহের আজ্ঞাবহএ অবস্থায় রাষ্ট্রসমুহ কার্যতই জাতিসংঘ নামের এককেন্দ্রীক এক শক্তির অধীনে চলে যাবে
রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক হলো জাতীয়তাবোধএই জাতীয়তাবোধ বিলোপ অথবা দুর্বল করারও একটা প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী চলছেজাতিসংঘ তার উন্নয়ন, সেবা ও শান্তি প্রতিষ্ঠামুলক এজেন্সী সমুহের মাধ্যমে একটা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোন গড়ে তুলছে এবং পারস্পরিক নির্ভরতার এক অপরিহার্য অবস্থা সৃষ্টি করছেএ অবস্থা জাতীয় চিন্তাকে ধীরে ধীরে পেছনে ঠেলে দিবে এবং আন্তর্জাতিক বিবেচনাকে বড় করে তুলবেজাতিসংঘের পিছনে নাটের গুরুযারা, তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই শূন্য জাতীয়বোধঅবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন
এভাবেই পৃথিবীর আজকের শক্তিমানরা জাতিসংঘের ছায়ায় দাড়িয়ে জাতিসংঘকে নতুন এক বিশ্বরূপ দিতে চাচ্ছেজাতিসংঘের জননন্দিত সেক্রেটারি জেনারেল দাগ হ্যামার শোল্ড বলেছিলেন, জাতিসংঘকে হতে হবে বিশ্ব সংস্থা’, ‘বিশ্ব সরকারনয়সে হবে উন্নয়ন ও শান্তির সহায়তাকারীকোনক্রমেই জাতিসমুহের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কোন সিস্টেমের ডিক্টেশনকারী নয়কিন্তু জাতিসংঘকে আজ রাষ্ট্রসমুহকে দুর্বল ও নিয়ন্ত্রিত করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছেবিশ্বের দুর্বল জাতি সমুহের মত মুসলমানদেরকেও একবিংশ শতকের এই জটিল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে
বিশ্বে এক অর্থনীতি ও এক রাজনীতির মত গোটা বিশ্বকে এক সংস্কৃতির অধীনে আনারও দুর্দান্ত প্রয়াস চলছেএই লে দুনিয়ার মানুষের জন্য একক এক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কাজ করছেতারা চাচ্ছে গোটা দুনিয়ার জন্য মুল্যবোধের একক একটি সনদ  নির্ধারণ করতেএই মানদন্ডের নাম দেয়া হচ্ছে সেক্যুলার হিউম্যানিজমজাতিসংঘের এ সংক্রান্ত দলিল দস্তাবেজে এই তত্ত্ব দাঁড় করানো হচ্ছে যে, মানবাধিকার সকলের উর্ধ্বেজাতীয় ধর্ম, জাতীয় সংস্কৃতি, জাতীয় ঐতিহ্য ইত্যাদি অধিকার সবই এর অধীনএই অধিকারগুলো ততটুকুই ভোগ করা যাবে, যতটুকু মানবাধিকারঅনুমতি দেয়জাতিসংঘের এক দলিলে এভাবে বলা হয়েছে, সাংস্কৃতিক জীবন ও পরিচয়ের বিকাশসহ সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিটি ব্যক্তির জন্যেই স্বীকৃতকিন্তু এই সাংস্কৃতিক অধিকারকে সীমাহীন করা যাবে নাযখনই তা মানুষের অধিকারের উপর হস্তপে করে তখনই সাংস্কৃতিক অধিকার অচল হয়ে পড়েএর পরিস্কার অর্থ এই যে, সাংস্কৃতিক অধিকার মানুষের মৌল স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। (টহরঃবফ ঘধঃরড়হ ইধপশমড়ঁহফ ঘড়ঃব-নু উরধহধ অুঃবহ ঝযবহশব) এই দৃষ্টিভঙ্গিই জাতিসংঘের নাইরোবী সম্মেলন, কায়রোর  জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলন, কোপেন হেগেনের সামাজিক শীর্ষ সম্মেলন, বেইজিং এর বিশ্ব নারী সম্মেলন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে এবং আরও হবেউদ্বেগের বিষয় এসব সম্মেলনে সুকৌশলে প্রণীত ধর্মনিরপে মানবতাবাদ (ঝবপঁষধ ঐঁসধহরংস) প্রতিষ্ঠার দলিলে অধিকাংশ মুসলিম দেশও দস্তখত করেছেঅথচ জাতিসংঘ প্রচারিত ধর্মনিরপে মতবাদএর তত্ত্ব মেনে নিলে ইসলামকে কেটে ছোট বিকলাঙ্গ করে মসজিদে পুরে রাখতে হবেতাদের বলা উচিত ছিল, তথাকথিত সার্বজনীন মানবাধিকার আইন নিশ্চিত ভাবেই মানব জীবন, তার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ঐতিহ্য সংরনকে বিপর্যস্ত ও বিপন্ন করে তুলতে পারেইসলামের আদর্শ ও  সংস্কৃতির মাধ্যমে কার্যকরভাবে যদি মানব মর্যাদার প্রতিষ্ঠা হয়, সেটাই হয় সত্যিকারের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকিন্তু এই কথা কেউ আমরা বলিনি
এভাবে অন্য কেউও বলছে না, অন্য জাতি, অন্য ধর্মও নয়তার ফলে, ‘ধর্মনিরপে মানবতাবাদ’-ই বিশ্ব সংস্কৃতির একমাত্র মানদণ্ড  হয়ে দাঁড়াচ্ছেঅন্য কথায় এটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব সংস্কৃতি
এর ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহআমরা আমাদের ধর্ম পালন করতে পারবো নাউত্তরাধিকার আইনকে বলা হবে মানবাধিকার বিরোধী, শাস্তির আইন অভিহিত হবে বর্বর বলে, পর্দাকে বলা হবে মানবাধিকারের খেলাপ, কুরবানিকে বলা হবে অপচয় ইত্যাদিএমনকি ইসলামের দাওয়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে মানবাধিকারের পরিপন্থি বলেসবচেয়ে বড় কথা হলো, কোথাও জাতীয় আদর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠিত হলে তাকে অভিহিত করা হবে মানবাধিকার বিরোধী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবেসেকুলার হিউম্যানিজমপ্রকৃত পে সূদুরপ্রসারী একটা ষড়যন্ত্রএর ল্য মানুষকে তার অল্েয তার ধর্ম থেকে সরিয়ে নেয়ামানুষের ধর্ম না থাকলে তার জাতীয়তা ধ্বসে পড়বেজাতীয়তা ধ্বসে পড়লে তার রাষ্ট্রও ধ্বসে পড়বেএটাই চাচ্ছে আজকের ছদ্মবেশ নিয়ে দাঁড়ানো বিশ্বনিয়ন্ত্রকরা
বিশ্বে ধর্মসমুহকে বিশেষ করে ইসলামকে ধর্ম ও সংস্কৃতি বিরোধী এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে একবিংশ শতকে
বিশেষ করে ইসলামকেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবেকারণ, অন্য ধর্মগুলোর কোনটিই মানুষের পুর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে কার্যকরী নয়সুতরাং তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে না, করতে চাইলেও তারা পারবে নাকিন্তু ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানশুধু ইসলামই তাদের চ্যালেঞ্জ করে টিকে থাকতে পারেইসলামের শত্ররাও এ কথা বলছেঞযব ঊহফ ঐরংঃড়ু- এর লেখক ফ্রান্সিস ফকুয়ামা কম্যুনিজমের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘পাশ্চাত্য ও পাশ্চাত্য চিন্তা ধারার বিজয় প্রমান করছে যে, পশ্চিমা উদারনৈতিক মতবাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সব ব্যবস্থাই আজ খতম হয়ে গেছেকিন্তু তিনি আবার বলেছেন, তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা একটা হবে ধর্মের সাথে আসছে একবিংশ শতাব্দীতে এবং তাঁর মতে সে ধর্ম ইসলাম
সুতরাং একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীতে, মানবতার সামনে, তার মোকাবিলা ইসলামকেই করতে হবে
আর এ দায়িত্ব বিশ্বের মুসলমানদেরআনন্দের বিষয়, এ দায়িত্ব পালনের জন্য জাতীয় জীবনে যে রেনেসাঁর প্রয়োজন সে রেনেসাঁ আজ সৃষ্টি হয়েছে মুসলিম বিশ্বেরেনেসাঁর নিশানবর্দার সংগঠনেরও সৃষ্টি হয়েছে মুসলিম দেশে দেশেক্রমবর্ধমান হারে তরুনদের সম্পৃক্ততায় এ সংগঠনগুলো বিকশিত হয়ে উঠছেত্যাগ ও কোরবানীর েেত্রও রেনেসাঁ-কাফেলার নিশান বর্দাররা পিছিয়ে নেইআজ গোটা দুনিয়ায় আদর্শের জন্য ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিচ্ছে একমাত্র মুসলমানরাই
তবে প্রয়োজনের তুলনায় এবং চ্যালেঞ্জের নিরিখে এটুকু যথেষ্ট নয়এসব কাজকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করার জন্য মৌল কিছু বিষয়ে মুসলিম তরুনদের নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলা প্রয়োজনমৌল এই বিষয়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় :
নিজেদের জীবন ব্যবস্থা ও তার ইতিবৃত্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানার্জন, কোরআন-হাদীস এবং মহানবীর জীবন সম্পর্কেতো অবশ্যই, ইসলামের আইন ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ও সম্যক জ্ঞানার্জন করতে হবে
ইসলামী শিার আলোকে প্রতিটি মুসলিম তরুনকে তার চারপাশে যা আছে, যা ঘটছে তার প্রতি তীè নিরীনী দৃষ্টি রাখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে-  রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সব বিষয়ই এ নিরীনের েেত্র তাদের মনে রাখতে হবে, দৃষ্টি-মনোহারীতা নয় সত্যই আসল কথাআজ আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন প্রচারণা জোরে খুব সহজেই মিথ্যাকে সত্য প্রতিপন্ন করা হচ্ছেএই অবস্থায় গ্রহন বা বর্জনের েেত্র ইসলামী নীতিবোধ সামনে রেখে অনুসন্ধান, অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে
তীব্র সাংস্কৃতিক সংঘাতের এই যুগে মুসলিম তরুনদেরকে নিজেদের সাংস্কৃতিক নীতিবোধ ও পরিচয়কে ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবেআর্ট-আর্কিটেকচার থেকে শুরু করে জীবন চর্চার সকল েেত্র ইসলামের চিন্তা ও দর্শনকে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে এবং বুঝতে হবে ইসলামের সাথে অন্য সংস্কৃতিগুলোর মৌল পার্থক্য সমূহএই পর্যালোচনার জ্ঞান তাদেরকে নিজেদের এবং অন্যদের অবস্থানকে বুঝতে সাহায্য করবে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমর্থ্য করে তুলবে
মুসলমানদের বিজ্ঞানের যে পতাকা ৯শ বছর আগে অবনমিত হয়েছিলো এবং সাড়ে ৬শ বছর আগে ভূলুন্ঠিত হয়েছে, সেই পতাকার গর্বিত শির আবার উর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য মুসলিম তরুনদের এগিয়ে আসতে হবে
ইসলাম সকল যুগের সর্বাধুনিক মতবাদএ মতবাদকে যুগপূর্ব অচল ভাষা বা কৌশল নয়, যুগশ্রেষ্ঠ ভাষায় যুগোত্তর ল্য সামনে রেখে উপস্থাপন করতে হবে  শুধু তাহলেই এই আদর্শ যুগ-চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সকল মানুষের ঘরে গিয়ে পৌঁছতে পারবে
এই করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলে মুসলিম তরুনরা যে জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক শক্তিতে সজ্জিত হবে তা একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মূলতই সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকএই চ্যালেঞ্জর মধ্যে অবশ্যই অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমরশক্তির মত দিকগুলো আছেতবে এগুলোর অর্জন, অধিকার, ব্যবহার, কার্যকারিতা- সবকিছুই বুদ্ধির শক্তির উপর নির্ভরশীলকম্যুনিজম রার সব অস্ত্র সব অর্থ সোভিয়েত ভান্ডারে থাকার পরও বৈরী জ্ঞান ও সংস্কৃতির সয়লাবে যেমন তা শেষ হয়ে গেছে, তেমনি, ‘সেক্যুলার হিউম্যানিজমএবং আগ্রাসী পুঁজি ও আধিপত্য রার গণতন্ত্রতার ভান্ডারে সব অস্ত্র, সব অর্থ রেখেই শেষ হয়ে যেতে পারে, প্রয়োজন শুধু ইসলামের মহান মানবতাবাদী জ্ঞান ও সংস্কৃতির আধুনিকতম মানের প্রচন্ড এক সয়লাব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন