বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১১

অঙ্কুরিত স্বপ্ন= জুবায়ের হুসাইন


আরে সাইফু দোস্ত যে!পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল
ভাবনার তারটা টুন্করে ছিঁড়ে গেল সাইফুলেরজাস্ট একটা ছন্দপতন হলো যেনঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালপ্রথমে চিনতে পারল নাতারপর ক্রমে ওর সমস্ত চেহারায় খুশির একটা রং খেলে গেলআনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠে গিয়ে দাঁড়াল আগন্তুকের সামনেতারপর দুহাত প্রশস্ত করে তাকে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলআর বলতে থাকল, ‘দোস্ত হাবুল, কিরম আছিসরে তুই? কত দিন পর দেখা কতো? ওহ্! আমার যে কী ভালো লাগতেছে, তা তোরে বুঝায় কতি পারবো নাআয়, বয় (বোস)আজ পরান খুলে গল্প করবো দুই দোস্ত
একনাগাড়ে এতগুলো কথা বলে তারপর থামল সাইফুলহাবুলকে প্রায় টেনে শিমুল গাছের মোটা শিকড়টার ওপরে বসালনিজেও পাশে বসল
হাবুল এতক্ষণ হতভম্ব হয়ে ওর কথা শুনছিল আর কান্ড-কারখানা দেখছিলএক্ষণে বলল, ‘এই যে একসাথে এত্তোগুলো কথা কলি, আমি এখন কোনটে থুয়ে কোনটের জবাব দেব তুই-ই কয়ে দে
দোস্ত, তুই রাগ করিছিস হাবুল? আসলে হয়েছে কী...
থাক থাক, তোরে আর কিছু কতি হবে নাসাইফুলকে থামিয়ে দিয়ে বলল হাবুলশুনলাম তুই আইছিস, তাই আর থাকতি না পেরে দেখা কত্তি আসলামতা থাকবি কয়দিন?’
এবার সহজেই যাচ্ছিনেরে হাবুলবলল সাইফুললম্বা ছুটি নিয়ে আইছিএকটা বিশেষ কাজে আইছি কি-না!
ও!
বলেই কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল হাবুলসাইফুল তা খেয়াল করল নাওর যেন আজ কথার জোয়ারে পেয়ে বসেছেতাই বলে চলেছে, ‘আসলে ঢাকা শহর এখন আর বসবাসের উপযোগী নেই রে দোস্তচারিদিকি খালি গ্যাঞ্জাম আর গ্যাঞ্জামসারাদিন গাড়িঘোড়ার শব্দ শুনে শুনে কানটাই গেছে নষ্ট হয়েকোনো কাজের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হলি ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম আর সিগনালে পড়ে থাকতি হয়তুই যদি নির্দিষ্ট সুমায় কোথাও যাতি চাস, তালি অন্তত দুই ঘণ্টা আড়াই ঘণ্টা সুমায় হাতে নিয়েই তবে বেরোতি হবেযত না সূর্যের তাপের গরম, তার থেকে বেশি গরম মানুষের জন্যি, বুঝলি? চারপাশে খালি মানুষ আর মানুষগিজগিজ গিজগিজ করেআর উঁচো উঁচো দালানের কথা তো কয়াই লাগে নাএকটার সাথে যেন আরেকটা পাল্লা দিয়ে খালি উপরের দিকি উঠতি চায়কয়দিন আগেই তো খবরের কাগজে আর টিবিতে দেখিছিস কয়টা দালান হেলে পড়েছেলোকজন সব সেখান থেকে পলাচ্ছেবিশ্বাস কর, তুই শত চিষ্টা করেও নীল আকাশের দেখা সেখেনে পাবিনেপেজা তুলোর মতো সাদা মেঘের উড়ে বেড়ানো আর তার সাথে গাংচিল ও সাদা বক কিংবা অচিন পাখির উড়ে যাওয়া দেখার আশা তো দুরাশাইপাখির ডাক? উঁহু, কক্ষনো সে চিন্তা করাও যাবে নাতবে একটা পাখির ডাক তুই ঠিকই শুনতি পাবিতো কী পাখি...পাশ ফিরে হাবুলকে অন্যমনস্ক দেখে কথা বলা থামিয়ে দিলজিজ্ঞেস করল, ‘এই হাবুল, দোস্ত, তুই কি আমার কথা শুনছিসনে? দূর! এতক্ষণ তালি আমি কার সাথে কথাগুলোন কলাম? হাবুল, এই হাবুল?’
ওকে ধরে ঝাঁকি দিল সাইফুলতাতে যেন সম্বি ফিরে পেল হাবুলবলল, ‘উঁ! না মানে হঠা যে কী হলো না, আমি যেন কেমন, মানে...
অবাক হলো সাইফুলশঙ্কিত হয়ে উঠলচেহারায় তার পূর্ণ অভিব্যক্তি ফুটে উঠলবলল, ‘কোনো প্রবলেম দোস্ত? বি তো, আমারে তো সব খুলে কবি নাকি!
না কিছু না, ওই হয়েছে কী, আসলে...আমতা আমতা করতে লাগল হাবুল
দেখ,’ বলল সাইফুলআমি গিরামে আইছি একটু রেস্ট নিতিখোলা আকাশের নিচেই নির্মল বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ার জন্যি আমি সেই ঢাকা থেকে ছুটে আইছিএই সেই শিমুল গাছ, শীতির ভোরে যে গাছের তলা থেকে ফুল খুটে নিয়ে গিছি সুমার মারে খাওয়ানোর জন্যিসুমার মা ছিল আমাদের সবচেয়ে ভালো ছাগলডাপ্রতি বছর তিনটে করে বাচ্চা দিত ছাগলডাএই পুকুরি কতো সাঁতার কাটিছি আমরা, ডুব দিয়ে ধরাধরি খেলিছিআর কাটা ঘুড়ির পিছনে ছুটতি ছুটতি উঠে গিছি কুঞ্চি ভরা বাঁশ গাছেএকবার মনে আছে, এই শিমুল গাছের সবচেউপরের ডালে বাঁধল তে-রঙা ঘুড়িডা? তুই আমারে জোর করে ঠেলে উঠিয়ে দিলি গাছেহাঁচড়ে-পাঁচড়ে আমি ঠিকই উঠে গিলামতারপর যখন ডাল থেকে আলগা করে ঘুড়িডা নিচেই ছেড়ে দিলাম, তখন সেটা তোর হাতে না গিয়ে পড়ল পুকুরডার মধ্যিখানেআমি কানতি কানতি গাছ থেকে নেমে আসলামতুই আমারে সান্ত্বনা দিলি।...
আরও অনেক কথাই বলত হয়তো সাইফুল, কিন্তু হাবুলের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারল নাফ্যালফ্যাল করে বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল কয়েক মুহূর্ততারপর জিজ্ঞেস করল, ‘খারাপ কিছু হয়েছে তোর?’
হাবুল মুখে কোনো কথা না বলে উপর-নিচ মাথা নাড়াল কেবল
সাইফুল বলল, ‘আমারে কবি কী হয়েছে?’
তি ইচ্ছে কচ্ছে না
তালি আমার সামনে মুখ গুমড়া করে রইছিস কেন? তুই কি চাস আমি আজই ঢাকায় চলে যাই?’
না
তালি চল, গিরামডা একটু ঘুরে আসি
কনে কনে যাতি চাস তুই?’
সব জায়গায়, আমরা একসাথে যেখেনে যেখেনে যাতাম, সেই সব জায়গায় যাবআমার তো অনেক জায়গার কথা মনেই নেইতোর তো মনে আছেকোনো জায়গা বাদ দিবিনে কিন্তু, সব জায়গায় নিয়ে যাবিআর যাতি যাতি তোর কথাও শোনবো। ...চল এবার
উঠে দাঁড়াল সাইফুলউঠল হাবুলওতারপর হাঁটতে শুরু করল
সাইফুল আর হাবুল, এক সময় খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল ওরাওদের আর এক বন্ধু ছিল রনি, বছর তিনেক হলো ক্যান্সারে মারা গেছেএই তিনজন মিলে একসময় গ্রামটাকে মাতিয়ে রাখতগ্রামের লোকেরা যেমন ওদের নিয়ে অতিষ্ট হতো, তেমনি উপকারও পেততাই ওদের বিরুদ্ধে শত নালিশ থাকলেও সবাই বেশ পছন্দই করত ওদের
রনিটা বেশ রোগা ছিলএকেবারে টিংটিঙে শরীর ছিল ওরসাইফুল তো ঠাট্টা করে প্রায়ই বলত, ‘তোকে ফেলে দিতি কোনো ঝড় লাগবে নারে রনি, ফাঁকা মাঠে দাঁড়ালি হালকা একটু বাতাসেই তুই চিপটাং হয়ে যাবি
এহ্,’ সাইফুলের কথা শুনে বলত রনিবললিই হলো! এই আমি শক্ত হয়ে দাঁড়ালাম, মার তো ধাক্কা দেখি ফেলতে পারিস কি না?’
সাইফুল কিন্তু ওকে ধাক্কা মারত নাপাছে সত্যিই পড়ে যায়আসলে বন্ধুকে ও ছোট করতে চাইতো না কখনওএই বিষয়ে যখন প্রায়ই ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে থাকল, তখন একদিন অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধাক্কা মারল সাইফুলধাক্কাটা বেশ জোরে না হলেও মোটামুটি জোরে ছিলকিন্তু কী আশ্চর্য! তালপাতার সেপাই রোগা পটকা রনিকে একচুল নড়াতে পারল না ওএরপর থেকে ওকে খেপানো বাদ দিতে হলো ওকে
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সাইফুলবলল, ‘তোর মনে আছে হাবুল, যেদিন আমি ধাক্কা মেরে রনিটারে একচুলও নড়াতে পারলাম না, সেদিনই ও বলেছিল, ‘তুই আমারে ফেলতি পাল্লিনে ঠিক আছেকিন্তু দেখিস, আমি ঠিকই একদিন পড়ে যাবসেদিন তুই হাজার চিষ্টা করেও আমারে উঠানো তো দূরির কথা, সুজা করেই রাখতি পারবিনেআমি ওর কথা হেসেই উড়িয়ে দিলামও তখন বলল, ‘আমি সত্যিই একদিন তোদের ছেড়ে চলে যাবরে দোস্তসেই দিনটির কথা মনে হলি আমার খুব কান্না পাইআমি আর বাঁচবো নারে সাইফুলহাবুল, আমি, আসলে...
সাইফুলের চোখের কোণটা ভিজে উঠলনিজের অজান্তে দু  বেয়ে দুফোঁটা তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে নেমে গেলসে অশ্রুটুকু মোছার কোনো চেষ্টা না করেই বলল, ‘ও একদিন ঠিকই আমাদের সবাইরে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলসত্যিই ওরে সুজা করে রাখা গেল নাআমি তো ওরে শেষ দেখাডাও দেখতি পাল্লাম নাআমি, আমি ওর এই কবরের সামনে দাঁড়ায় স্থির থাকতি পাচ্ছিনেরে হাবুলআমি, আমি....
আর কোনো কথা বলতে পারল না সাইফুলকান্নায় ওর কণ্ঠ বুজে এল
হাবুল ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘রনির জন্যি আমারও মেলা খারাপ লাগেকিন্তু আমাদের কিইবা করার ছিল কওর ভিতরে যে কঠিন রোগ ডানা বেঁধে উঠছিল তাকি ও কাউরে জানতি দিয়েছে? দেয়নিএখন আর কেন্দে লাভ নেইতারচেআয়, ওর জন্যি আমরা মাবুদের দরগায় দুয়া করি, ও যেন পরকালে সুখি থাকে
দুহাতের তেলো দিয়ে চোখের পানি মুছল সাইফুলতারপর দুহাত তুলে প্রিয় বন্ধুর জন্য প্রভুর দরবারে ধরনা দিলএবার শুধু সদ্য শুকানো দুগ ই না, সমস্ত মুখ-বুক ভাসিয়ে ফেলল চোখের নোনা পানিতে
* * *
আজ রাতের বাসেই ঢাকা যাবে সাইফুলযাবার আগে হাবুলের সাথে দেখা করলএর আগেই ও হাবুলের সমস্যাটার কথা জেনেছেকিছু পরামর্শও দিয়েছেআজ চূড়ান্ত একটা পরামর্শ দিয়েই তবে ঢাকা যাবে বলে ঠিক করেছেতাই এই দেখা করা
গ্রামে হাবুলের একটা মুদি দোকান আছেবুড়ো বাপ এখন আর পেরে ওঠেন নাতিনি সমর্থ্য থাকতে হাবুলকে সংসার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নিকিন্তু একটা ব্রেন স্ট্রোকের পর শরীরের বাঁপাশটা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার পর সংসারের হাল তাকেই ধরতে হয়তাছাড়া পরিবারে একটা মুখ বেড়েছে, এখন তার মুখেও খাবার জোগাতে হয়তাই একপ্রকার অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাবার মুদি দোকানটা ওকেই দেখাশোনা করতে হয়নইলে ইচ্ছা ছিল শহরে গিয়ে কোনো ব্যবসা-ট্যবসা করবেসেজন্য কিছু পুঁজিও ম্যানেজ করেছিলকিন্তু এখন সেসব চিন্তা একপ্রকার বাদ দিয়ে বাবার দোকানটা নিয়েই পড়েছেবাবার ওষুধ আর ছেলের ডাক্তার খরচ দিতে দিতে হাবুলের এখন অবস্থা খুবই খারাপশহরে গিয়ে ব্যবসা করার জন্য যে পুঁজিটা ও সংগ্রহ করেছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেছে কয়েক মাস হলোতাই এর ওর কাছ থেকে ধারদেনা করে দোকানে মাল তুলল কয়েক মাসকিন্তু পুঁজি ধরে রাখতে পারল নাফলে দিনে দিনে দেনা বাড়তে লাগল ওর
আলিমুদ্দিন দফাদার গ্রামের একজন বেশ সমর্থ্য মানুষবিপদে-আপদে গ্রামের মানুষ সবার প্রথমে তার কাছেই ছুটে যায়হাবুলও গিয়েছিলতবে কথা হয়েছিল, সামনের আমন সিজনে ধান কাটার সময় টাকাটা শোধ দিতে হবেএখন সেই সময় প্রায় চলেই এসেছেইতিমধ্যে বার দুই তাগাদাও দিয়েছে আলিমদ্দিওদিকে অন্য পাওনাদারেরাও টাকার জন্য চাপ দেয়া শুরু করেছেদুই-তিন দিন ধরে ছেলেটার কাঁশিও দেখা দিয়েছেশহরে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখাতেও বেশ টাকা লাগবেসব মিলিয়ে বেশ ঝামলোয় পড়ে যায় হাবুলঅবশেষে উপায়ন্তর না দেখে অভিনয়টা করতেই হলো ওকেগ্রামের দক্ষিণের যে লম্বা দুটো তালগাছ নিয়ে বিভিন্ন কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত আছে, সেই তালগাছকে উপলক্ষ করে একটা কেচ্ছা বানিয়ে ফেলল ওএতে অন্তত কিছুদিন পাওনাদারদের তাগাদা থেকে রেহাই পাওয়া যাবেসেই অনুযায়ীই সেদিন রাতে ওখানে ভূতের ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার ভান করলমিরাজকে সাথে নিয়ে এমনভাবে কাজটা সম্পন্ন করল যে, মিরাজও একেবারে বিশ্বাস করে ফেলল যে হাবুলকে সত্যিই ল্যাংড়া জিনে আঁছড় করেছেসে তাই সফলভাবেই বিষয়টা গ্রামময় প্রচার করে দিলকিন্তু বাঁধ সাধল আলিমদ্দি দফাদারঘটনার কথা শুনে সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনিতাই তো ছুটে এসেছে হাবুলের বাড়ি এবং কৌশলে সব বের করে নিয়েছেএখন তাই মহা ঝামেলায়ই পড়ে গেছে হাবুলআর কারোর না হোক, দফাদারের টাকাটা ওকে শোধ করতেই হবেঅবশ্য সাইফুলকে সব বলতে চায়নি ওকিন্তু সাইফুল নাছোড়বান্দার মতো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব জেনে নিয়েছে
এখেনে হাজার চল্লিশের মতো টাকা আছে,’ পাঁচশ টাকার একটা বান্ডিল হাবুলের জামার পকেটে গুঁজে দিয়ে বলল সাইফুলআলিমদ্দি দফাদারের টাকাটা আগে দিয়ে দিসতারপর বাবুরে শহরে নিয়ে গিয়ে ভালো একটা ডাক্তার দেখাবিএরপর অন্যদের টাকা শোধ দিবিমনে হয় তারপরেও কিছু টাকা বেঁচে যাবেনেতা দিয়ে দুকানে মাল তুলিস
হাবুল প্রথমে কিছুই বলতে পারে নাকেবল ফ্যালফ্যাল করে বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেতবে তার সে চোখে শূন্য দৃষ্টি
তা দেখে সাইফুল আবার বলল, ‘আরে কী দেখতিছিস এমম করে?’
না মানে তুই, মানে তোর টাকা...
ও এই কথা? আরে দোস্ত, আমি তো একটা ঘর তুলার জন্যি টাকাটা নিয়ে আইলামতুই তো বউ-ছওয়াল নিয়ে ভালোই আছিস, আমিও চাইছিলাম তোর একটা ভাবি ঘরে আনতিকিন্তু টাকাটা তো তোর এখন খুবই প্রয়োজনআগে তো তোর প্রয়োজনটা মিটুক, ঘরটা না হয় আরও কিছুদিন পরেই হবেনে, আর তোর ভাবিও ততদিন অপেক্ষা কত্তি থাকুক
দোস্ত আমি তোর এই ঋণ কোনোদিন শোধ কত্তি পারব নাচোখজোড়া ছলছল করে উঠল হাবুলের
দুহাতে হাবুলের দুকাঁধ ধরে মৃদু ঝাঁকি দিল সাইফুলবলল, ‘আরে শালা টাকাটা কি আমি তোরে একেবারেই দিয়ে দিচ্ছি নাকি? সুমায়-সুযোগ মতো শোধ দিয়ে দিবিএখন আসিরে, গাড়ির সুমায় হয়ে যাচ্ছে
হাবুলের চোখের দুফোঁটা তপ্ত লোনা পানি গন্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে ওর ফুলে ওঠা জিহ্বায় পড়লতাতেই যেন সম্বি ফিরে পেলবলল, ‘আজ তোরে বিদায় দিতি একদম ইচ্ছে কচ্ছে নাআজ থেকে যা-না!
নারে দোস্ত, তা হয় নাবলল সাইফুলজানিসই তো প্রাইভেট কোম্পানিনানান ঝামেলা সব সুমায় লেগেই থাকেআমি যাই রে
ভালো থাকিসবলল হাবুল
হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে হাঁটা শুরু করল সাইফুলএকবারও পেছনে ফিরে তাকাল না
মায়ের ইচ্ছাকে কবর দিয়ে যাচ্ছে ওছুটি শেষ হতে এখনও দিন চারেক বাকি আছেতার আগেই ও চলে যাচ্ছেমূলত মায়ের চিঠি পেয়েই ও বেশি করে ছুটি নিয়ে গ্রামে এসেছিলকিন্তু যখন শুনল প্রিয় বন্ধুর দুরবস্থার কথা, তখন নিজের সাথে বেশ করে ... ওঅবশেষে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোই স্থির করলরনিকে হারিয়েছে ও, শেষ দেখাটাও দেখতে পায়নিতাই হাবুলকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার জন্য মায়ের চাওয়াকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়েছেআর নিজেকেও কি ঠকায়নি ও? তা তো অবশ্যই ঠকিয়েছেঠকিয়েছে মাকেও।...
নাহ্, আর ভাবতে চাইল না সাইফুলসময় নিয়ে চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ওএই নিঃশ্বাসের সাথে বের করে দিতে চাইল সদ্য দেখতে থাকা সোনালি স্বপ্নের রেশটাআপাতত অঙ্কুর অবস্থাতেই ঘুমিয়ে থাক ওটাপরে সময় মতো জাগিয়ে নেয়া যাবে
আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লতারপর দ্রুত পা চালাল সামনের দিকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন