বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১১
আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক প্রভাব
আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক প্রভাব
মুহাম্মদ সাকিল উদ্দিন
মানব জাতি ধন্যদশা থেকে সংস্কৃতি আবিস্কার ও তা লালন করার মাধ্যমেই মনুষ্যত্ব অর্জন করে মানুষ হয়েছে। পৃথিবীর বিবর্তন ও মানুষের ইতিহাস থেকে এটিই জানা যায় । মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে আস্তিক ও নাস্তিকের মধ্যে ব্যাপক মত পার্থক্য থাকলেও মূলত সংস্কৃতির উদ্ভব এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডই সে মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে এতে কোন মতানৈক্য নেই । মানুষের পোশাক ব্যবহার, ইশারা থেকে ভাষার মাধ্যমে কথা বলা, কাঁচা খাবার থেকে আগুনে পুড়ে খাবার গ্রহন, খাদ্য সংগ্রহ, খাদ্য সংগ্রহ থেকে মজুদ করার অভ্যাস। কৃষিকাজের মাঝে চাষের ধারণা, পশু পালনের ধানণা এভাবে পুকুর খনন, কুপ খনন করে সুপেয় পানির সংরন এভাবেই যুগের পবিবর্তনে মানুষের কথা, কাজে, ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। সেই মানুষ এত হীন আস্তা থেকে উন্নতির ল্েয প্রযোজনের আলোকে সৃষ্টির উল্লাসে মেতেছে এবং প্রাণীকুল থেকে মানব কুলকে আলাদা করতে সম হয়েছে। সেই মানুষ কোন রকম সংস্কৃতির লালন করবে সেটা কি উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি হওয়া উচিত নয়? মানুষের সুখ দুখের জীবনে বিনোদন আপরিহার্য একাটি উপাদান। কিন্তু শুধুমাত্র এই বিনোদানের মাধ্যমেই কি সংস্কৃতির ব্যবহার করা হয়? নাকি মানুষের সামাজিক মূল্যবোধে ও এর প্রভাব রয়েছে। কথা বলা, পোশাক পরিধান করা, পারস্পরিক সম্বোধন, লেনদেন এগুলোর কি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। দেশীয় ঐতিহ্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক প্রথা, আইন-কানুন এসব কি সংস্কৃতিক মূল্যবোধের বাইরের কোন বিষয়। যদি মানব জীবনের উল্লেখিত সকল দিকেই কোন না কোনভাবে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিপালন হয়। তাহলে এর একটি নীতিমালা হওয়া জরুরী নয় কী? কারণ প্রত্যেকটি দেশেই সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পার্থক্য রয়েছে বিভিন্ন জাতি গোষ্টির বসবাসের কারণে। মানুষের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ কখনই তার ধর্মীয় মূলবোধের বাইরে হতে পারে না। মানুষ তা মনে করেও না । যেমন খাদ্যভ্যাসের েেত মুসলমানগণ শুয়োর,সাপ,ব্যাঙ্গ, কেচোঁ এগুলো ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণেই খান না। আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীগন তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গরুর গোশত খান না। অপর দিকে পরস্পর পরস্পরের নিষেধাজ্ঞায় খাবার গুলো অনায়াসেই গ্রহন করে থাকেন। এভাবে, পাহাড়ী জাতিবাদী এবং সমতলের গারো ও সাওতাল প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা খাদ্যভ্যাস, পোশাক ভাষায়, বিনোদন ইত্যাদি রয়েছে সবই স্ব-স্ব ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নয়। তাহলে জাতীয়ভাবে এমন কিছু বিষয় চর্চা হয় যা কিনা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের বাইরে যায় তেমন কিছু বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিগত নীতিমালা অবশ্যই থাকতে হবে। একটি দেশের জনগনই তাদের জাতীয় মুল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত থাকে সব সময়। ঠিক তেমনি সেই জাতীয় মূল্যবোধটা কি তা যদি নির্ধারিতই না থাকে অথবা এমন কিছুকে মানদন্ড ধরা হয় যা কিনা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক মূল্যবোধের বাইরে তাহলে তখনই সামাজিক ও মানবিক বিপর্যয় দেবে। সেটা এখন আমাদের দেশে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। অফিস আদালতে ঘুষ, দূর্নীতি, দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি, বিরোধী মনোভাবাপন্নদেরকে ওএসডি, হাট বাজারে লেনদেনে কম দেয়া। ওয়াদা ভঙ্গ করা, ভেজাল খাদ্য, ঔষধ পানীয়তে বাজার সয়লাভ। স্কুল-কলেজে ছাত্রীদের উত্যক্ত করা মাদক গ্রহন করে বিপর্যয় সৃষ্টি, অর্থের লোভে টেন্ডারবাজি, দখল লুট আধিপত্য বিস্তার এসব অপকর্ম মানুষের অনৈতিক মূল্যবোধ থেকেই উৎপন্ন হয়। আর এই নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি হয় ধর্মীয় জ্ঞানার্জন, চর্চা এবং সুস্থ্য সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ হচ্ছে ইসলাম। সেখানে যদি জাতীয়ভাবে সকল প্রকার কর্মকান্ড ও দৃষ্টিভঙ্গির লালন করা হয়, তাহলে অনৈতিকতাকে রুখার পরিবর্তে বরং উসকে দেয়া হচ্ছে না কি? কয়েকটি প্রশ্ন রাখার প্রয়োজন মনে করছি। জাতীয় নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের কাছে। বাংলাদেশের সমাজে যত অপকর্ম ঘটছে একটু তাদের অতীত পর্যালোচনা করছেন কি? এদের কতজন ধর্মীয় শিায় শিতি অথবা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা লোক। দূর্নীতির উদাহরণ বন খেকু ওসমান গনি কি বি.সি.এস ক্যাডার ছিলেন না? তারপরেও সরকারী সম্পদ আত্মসাত করলেন কেন? ইভটিজিং এর কবলে যত দূর্ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে মাদ্রাসা ছাত্র এবং ধর্মীয় জ্ঞান সম্পন্ন যুবক কতজন। ধর্ষন, খুন অপহরণ শিককে কলেজের মধ্যে নিজ কে তালাবদ্ধকরণ, প্রেমিকার পিতামাতাকে খুন, পরকীয়া করে নিজের সন্তানকে খুন, এসব কি কোন ধর্মীয় জ্ঞান সম্পন্ন লোক করেছে। বিশেষ বিশেষ দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে যেভাবে মদ পানের আয়োজন করা হয় কোন মাদ্রাসার হোস্টোলে কি তা কখনো ঘটেছে? কোন কনসার্টে যেভাবে তরুন তরুনীরা অশ্লীল নাচে গানে অংশ নিয়ে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে তেমনি কোন ইসলামী জলসায় অথবা ইসলামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ঘটেছে? তাহলে এসব সুন্দর সমাজ দেশ গঠনের জন্য কোন প্রকার সংস্কতি ও দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয়ভাবে লালন করা উচিত? তাফসির মাহফিল বন্ধ করে দিয়ে শাহরুখ খানের নেংটা নাচ প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের বিনোদনের ত্রেগুলোকে বলা হয় নষ্ট সিনেমা সমাজের দর্শন তাহলে আমরা কি দিছি সিনেমার মধ্যে। শয়তানী চরিত্রে থাকা লোকটার মুখে দাড়ি টুপি না দিলে কি ভিলেন চরিত্র ফুটে ওঠেনা? সিনেমার অনুমোদন দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তব্যক্তিগন কি একবারে চিন্তা করেছেন যে সমাজে খারাপ কাজগুলো কি টুপি দাড়ি ওয়ালা লোকেরাই করে থাকে যে, নাটকে সিনেমায় ভিলেন চরিত্রে এমন সাজে তাকে সাজানো হবে। তাহলে বাস্তব অবস্থাটা আসলে কি? এর অর্ন্তনিহিত কারণ খোঁজা আজ বড় জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রাসঙ্গিক কারণে উল্লেখ করছি যে, আমার একবার ভারত ভ্রমনের সুযোগ হয়েছিল। ১৪দিন সেখানে অবস্থান করে ঘুরে বেড়িয়েছি। হোটেলে টিভি খুললে অন্যান্য প্রদেশে তো প্রশ্নই ওঠেনা স্বয়ং বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশের একটা চ্যানেলও দেখতে পাইনি। তাহলে আমাদের দেশের ভারতের এত চ্যানেল উন্মুক্ত করে দেয়ার মূল উদ্দেশ্য কি ? এত বড় বৈষম্যের আসল কারণ কি হতে পারে? আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকগন আধুনিকতার নামে পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং ভারতীয় অশ্লীল সংস্কৃতি আমাদানি করেছেন ৮৫% মুসলমানের প্রদেয় করের টাকায়। জাতীয় অর্থ থেকে এসব ইসলামী মূল্যবোধহীন এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত অশ্লীল সংস্কৃতি, সিনেমা, নাটক, এখানে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে কেন? তাদের কি চোখ খোলে নি, নাকি জেগে ঘুমাচ্ছেন নাকি কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন? আমরা বলতে চাই। ৫২’র ভাষা আন্দোলন করেছি উর্দূর বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার জন্য, হিন্দি শেখার জন্য নয়, ৭১’সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছি পিন্ডির রাজমুক্ত হয়ে দিল্লির অধীন হওয়ার জন্য নয়। দেশের ৮৫% ইসলামী মূল্যবোধের জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগনকে মানুষ নির্বাচিত করছে। কি সকল ব্যাপারে ইসলামের বিরোধীতার জন্য? মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশের শাসক দলে নাস্তিকদের অংশগ্রহন ইসলামী চেতনার প্রতি কত বড় আঘাত তা যদি নীতি নির্ধারকগন বুঝতেন, নিজেদের মূল্যবোধ ও যদি তারা ব্যক্তিগতভাবে লালন করতেন, তাহলে সাময়িক মতা এবং অর্থের লোভে ইসলাম বিরোধী শক্তির ক্রীড়নক হয়ে যেতেন না। এখনো সময় আছে। আমাদের সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে মানুষের চালিকা শক্তি সংস্কৃতির সুস্থ্য বিকাশের কোন বিকল্প নেই। এজন্য ধর্মহীন শিানীতি বাতিল করে ইসলামী শিা ব্যবস্থার প্রচলন আজ সময়ের দাবী। ভারতীয় সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বানানোর অপচেষ্টা স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। এছাড়া আমাদের দেশের অভ্যন্তরীন সমস্যায় সমাধানের ল্েয ও সুস্থ্য এবং ধর্মীয় মূলবোধ সম্পন্ন সাংস্কৃতিক নীতিমালা তৈরি কর প্রয়োজন। উন্নত জাতি গঠনে বিশ্বে মাথা তুলে দাড়াতে হলে নিজস্ব মূল্যবোধ বিসর্জন দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক চিত্র সামনে রেখে এর ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করছি।
১। ইসলামী শিা ব্যবস্থার প্রবর্তন (অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাদের ধর্মীয় শিানীতি) করতে হবে।
২। বাংলাদেশী সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতির সমন্বয়ে সাংস্কৃতি নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে।
৩। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অপসংস্কৃতির আমাদানি বন্ধ করতে হবে।
৪। ওপেন কনসার্ট বন্ধ করতে হবে। মিলনায়তন গুলোকে এসব অনুষ্ঠানে নারী পুরষের আলাদা গ্যালারীর ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। সকল শিা প্রতিষ্ঠানে ড্রেসকোড নির্দিষ্ট করতে হবে শালীন পোশাকের মাধ্যমে।
৬। শিাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি হল গুলোতেও ধূমপান সহ সকল প্রকার মাদক নিষিদ্ধ এবং ব্যবহার কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৭। ঘরের বাইরে ও নারী পুরুষের শালীন পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৮ । সিনেমা, নাটকে অশ্লীলতা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। ঢালাওভাবে এসবের অনুমোদন দেয়া যাবে না।
৯। বিভিন্ন থিয়েটারের মতো ইসলামী জলসা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও ব্যাপকভাবে সরকারী বরাদ্ধ দিতে হবে।
১০। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এসব অসামাজিক ও বেআইনী কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রনে আরো সচেতন ও কঠোর হতে হবে।
মৌলিকভাবে উল্লেখিত প্রস্তাবনা সুপারিশ মাত্র। দেশ ও জাতির স্বার্থে নীতি নির্ধারকগন বিষয়গুলো সামনে রেখে যথাযথ পদপে গ্রহন করবেন, এটাই আজ সমগ্র জাতির প্রত্যাশা ও দাবি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন