বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১১

শুরু হোক সুস্থ্য সংস্কৃতির বিকাশ = মোহসেনুল মান্না


গত এপ্রিল মাসের শিাঙ্গন পত্রিকায়  চারটি প্রবন্ধ দেখলামপ্রবন্ধগুলো ছিল যথাক্রমে সালেহ উদ্দিন জহুরীর লেখা নৈতিক মূল্যবোধের অবয় ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব’, সাবেক সচিব শাহ আব্দুল হান্নানের লেখা ইসলামী সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য তাওহীদ’, মোহাম্মদ আশরাফ আলীর লেখা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির রায় পশ্চিমা সংস্কৃতির আমদানী বন্ধ করা দরকার’,মুহাম্মাদ নুরুদ্দিনের লেখা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে মুসলিম বিশ্ব-ইহুদী খ্রীস্টান চক্রের সূদুর প্রসারী ষড়যন্ত্রউল্লেখ্য এপ্রিল মাসের শিাঙ্গনে মোট বিশটি আইটেমে লেখা ছিলএর মধ্যে ৫-৬ টি ছিল নিয়মিত আইটেমবাকী আইটেমগুলোর মধ্যে চারটিই সংস্কৃতিকেন্দ্রিকএটা  দেখে কোনো নতুন পাঠক ভেবেও বসতে পারেন যে শিাঙ্গন হয়ত কোনো সংস্কৃতি গবেষণা মূলক পত্রিকাযে যাই ভাবুক আমার কাছে কিন্তু অত্যন্ত ভালো লেগেছে এবং এতই ভালো  লেগেছে  যে এই প্রথমবারের মত শিাঙ্গনে লিখতেও বসলামএর আগেও কয়েকবার শিাঙ্গনে লেখা দেবার জন্য লিখতে বসেছিলাম কিন্তু শেষ করতে পারিনিশিাঙ্গনের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ভাইয়ের সাথে থাকার সুযোগ হয়েছিলোতখনও  লেখার জন্য আগ্রহ জন্মেছিল কিন্তু  লেখা হয়নিরাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে রাজনীতি বিষয়েও লিখতে চেয়েছিলাম তাও শুরু করে আর শেষ করতে পারিনিপ্রিয় পাঠক দোয়া করবেন আজ যেন শেষ করতে পারিপ্রিয় পাঠক উপরোক্ত চারটি প্রবন্ধের সারমর্ম তৈরি করা নিশ্চয়ই নীরস বাস্তব জগত  থেকে রসালো শিল্প ও সাহিত্য তৈরী করার মত কঠিন কাজতথাপিও যারা উপরোক্ত প্রবন্ধগুলো পড়েননি তাদের সুবিধার্থে বলছি- ইসলামী সংস্কৃতি, এর গুরুত্ব, অপসংস্কৃতির খারাপ দিক এগুলোই বিভিন্নজন বিভিন্ন উদাহরণের আলোকে এবং বিভিন্ন উস থেকে রেফারেন্স দিয়ে আলোচনা করেছেনপ্রিয় পাঠক প্রত্যেক লেখকই হয়ত একটা মাথা ব্যথা নিয়ে লিখতে বসেনএকটু ল করুন অপসংস্কৃতির প্রবল আগ্রাসনই উপরোক্ত  লেখকদের মাথায় একটা ব্যাথার সৃষ্টি করেছে আর তাই তারা লিখতে বসেছেনকিন্তু তাদের মূল্যবান  লেখাগুলো আমার  চেতনায় আঘাত দিয়ে আমারও মাথায় একটা ব্যথার সৃষ্টি করেছেআর তা হল অপসংস্কৃতির এই আগ্রাসন থেকে বাচাঁর জন্য এবং জাতিকে বাচাঁবার জন্য আমাদের করণীয় কি? কি কি কর্মপন্থা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে? এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব উপরোক্ত লেখাগুলিতে নেইঅন্ততঃ এই একবিংশ শতাব্দীতে যেখানে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিদিন নতুন নতুন মাত্রা লাভ করছে সেখানে আমাদের করণীয় বিষয়ে কোনো গ্রন্থও বর্তমান নেইতবে মাঝে মাঝে অনেক সংস্কৃতি কর্মীর বক্তব্যে এ বিষয়ে কথা শুনেছিএই লেখাটিতে আমি অপসংস্কৃতির আগ্রাসন, এর ধরণ-প্রকৃতি প্রভৃতি নিয়ে কোনো আলোচনা করব নাএখানে শুধু   আগ্রাসন প্রতিরোধে দুটি উপায়ের আলোচনা করব
প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন যে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন শুধু বাংলাদেশে নয় এটি মুসলিম অমুসলিম সকল দেশে সমান তালে চলছেদাজ্জাল যেমন সমস্ত পৃথিবীকে একটি চামড়া দিয়ে আচ্ছাদিত করে রাখবে বা রেখেছে অপসংস্কৃতি  তেমনই গোটা পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করে  রেখেছেএর ভিত্তিমূল অনেক গভীরে প্রোথিতএই সংস্কৃতির ভিত্তিমূল শুধু সংস্কৃতির মধ্যেই নয় বরং এর ভিত্তিমূল অর্থনীতি ও রাজনীতির গভীরে প্রোথিততাই এর বিরুদ্ধে লড়তে হলে সেরকম সাজ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়েই লড়তে হবেএটা বর্তমানে এমন অবস্থানে গিয়েছে যে সাধারণ কিছু প্রবন্ধ লিখে বা এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে একে রোধ
করা সম্ভব নয়
অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধে আমাদের করণীয় দুটি কাজ হলঃ
সংস্কৃতি চর্চা
বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য বর্জন
সংস্কৃতি চর্চাঃ
এই ব্যাপারে কথা বলার আগেই বলে নিই সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জনৈক সমাজবিজ্ঞানী বলেছেন আমরা যা করি তাই আমাদের সংস্কৃতিসেই হিসেবে দেখবেন আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ যা করে হোক সে মুসলমান বা হিন্দু তারা ভালো কাজই বেশী করেআর ভালো কাজ করে  এর মানে হচ্ছে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করেআমাদের দেশের মানুষের জীবন যাপনের সংস্কৃতি, চলাফেরার সংস্কৃতি, পারিবারিক সংস্কৃতি, কেনাকাটা ও লেনদেনের সংস্কৃতি, পোশাক আশাকের সংস্কৃতি প্রভৃতি খুবই ভালো এবং শালীনযদিও রাজনৈতিক সংস্কৃতি অত্যন্ত নিম্নমানেরসুতরাং আমরা যা করি তা ভালোআপনারা ল করে দেখবেন যে স্থানটিকে আপনি অপসংস্কৃতির আঁখড়া বলে আখ্যায়িত করবেন সেটি হল আমাদের চলচ্চিত্রকেসেখানেও আপনি দেখবেন কোনো মেয়েলোক যিনি মিনি স্কার্ট আর ওড়না ছাড়া টপস পরে অভিনয় করেন তিনিও তার বাস্তব জীবনে এরকম ড্রেস পরেননাসাধারণভাবে তাদের চলাফেরা যদি কেউ দেখে থাকেন তাহলে দেখবেন সেটা মোটামুটি শালীনআরও কিছু উদাহরণ যেমন লিভ টুগেদারের কথা বলা যেতে পারে সেটাও বাংলাদেশে নেইএমন না আছে তবে তাও শতকরা হিসেবে জিরো পয়েন্ট সামথিং ও হবেনাকিন্তু সম্প্রতি আমরা দেখেছি ফারুকীর থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিতে এটাকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেনো এটা আবহমানকাল ধরে চলে আসছেসামাজিক অসঙ্গতি অবশ্যই নাটক,গান,সিনেমার মধ্যে অবশ্যই আসবে তবে তা পজিটিভলি নয় যাতে দর্শক স্রোতারা তা গ্রহণ করে
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত কথা গুলো এজন্যই বললাম  কারণ আমরা যা করি তা মোটামুটি ঠিকই আছে কিন্তু সমস্যা হল যা করি    তা উপস্থাপনের েেত্রআমরা যা করি অর্থা আমাদের সংস্কৃতি উপস্থাপনের ত্রেগুলো হল মিডিয়া বা টিভি চ্যানেলগুলো, সিনেমা, থিয়েটার,সঙ্গীত প্রভৃতিকিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই ত্রে গুলোতে আমাদের যাতায়াত অত্যন্ত সামান্যআমদের যাতায়াত এতই সামান্য যে আমাদের দু একটি মিডিয়া থাকলেও সেখানে আমাদের কোনো পদচারণা নেইআপনি বলবেন আমাদের একটা টিভি চ্যানেল আছেকিন্তু সেখানে দেখুন খবরটি ছাড়া আপনার আর কিছুই নেইতাও ৩০ মিনিট খবরের মধ্যে ৩ মিনিট আপনারওই চ্যানেলটা আপনার একথা আপনি তখনই বলতে পারবেন যখন ওখানকার শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীই নয় বরং অনুষ্ঠান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবগুলো আপনারএমনকি অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে যে এডভারটাইজ দেয়া হয় তাও আপনার বানানো এবং আপনার শিল্পীদের করা
প্রিয় পাঠক এ হচ্ছে একটি চ্যানেলের কথা যেটা আপনি আপনার বলে দাবি করেন সেখানেও আপনি যাদের আশা করেননা তাদের পদচারণাবাকি গুলোর কথা না হয় বাদই দিলামআমাদের এই দুরবস্থার কারণ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমাদের স্বল্প পদচারণাআমি আমার সংস্কৃতি মানুষের কাছে প্রদর্শনের ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র আইন করে বা অপসংস্কৃতির খারাপ দিক বর্ণনা করে অপসংস্কৃতির অগ্রযাত্রা কোনোদিনই ঠেকাতে পারব নাযা কিছু ভালো তাই ইসলামসুতরাং ভালো সংস্কৃতিই বলুন বা ইসলামী সংস্কৃতির কথাই বলুন সেখানে আমাদের পদচারণা বাড়াতে হবেচিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুনকে প্রায়ই বলতে শুনি আজকে যারা রাজনৈতিক ভাবে বিজয়ী তাদের এ বিজয় মূলত সাংস্কৃতিক বিজয়
প্রিয় পাঠক সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সবসময়ই সকল শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারেআগামীতে সুযোগ  পেলে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন রোধে বহুজাতিক কোম্পানীর পণ্য বর্জনের বিষয়ে লিখব ইনশাআল্লাহমহান আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি সংস্কৃতি চর্চার তাওফীক দিনআল্লাহ হাফেজ

লেখক : থিয়েটার পরিচালক
          নিমন্ত্রন সাংস্কৃতিক সংসদ  

1 টি মন্তব্য: