বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১১

আল কুরআন ও রক্তাক্ত ১১ মে = সালেহ আল ইমতিয়াজ


আল কুরআন বিশ্বমানবতার মুক্তির চির শাশ্বত ঐশী গ্রন্থএটি বিশ্বমানবতার মুক্তির সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাবএতে মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের সকল দিক-নিদের্শনা রয়েছেআল কুরআনের বিধানই মানুষের স্থায়ী কল্যাণ ও পারলৌকিক জীবনের মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টিএর কোনো বিধান পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংরণ মানুষের সাধ্যাতীতএটি সকল প্রকার ভুল ত্রটির ঊর্ধ্বেএই কুরআনের ভূমিকাতে তাই মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা দিয়েছে,‘ এতে কোনো সন্দেহ - সংশয়ের অবকাশ নেই। ( বাকারা : ২)কুরআন নাযিলের সূচনাপর্ব থেকেই এর বিরোধীতা শুরু হয়েছেআবু জেহেল, ওতবা, শাইবা, প্রমুখ আল কুরআনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র করেছিল তারা চেয়েছিল আল্লাহর নূর আল কুরআনকে ফুকার দিয়ে নির্বাপিত করতে কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে উদ্ভাসিত করলেন’( সূরা আস সফ : ৮)
আল কুরআনের চ্যালেঞ্জ ঃ  জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারের অমানিশায় নিমজ্জিত মানুষ বিদ্বেষবতশ কুরআনের যাদু, কবিতা, মানব রচিত, জীন ভূতের প্রভাব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেকিন্তু তাদের সব অভিযোগ ব্যর্থ হয়েছেআল কুরআন তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলে, ‘কুরআন যদি কোনো মানুষের  তৈরি বলে মনে হয়, তাহলে অনুরূপ একটি সূরা তৈরি করে আনোঅদ্যবধি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে মানুষ ব্যর্থ হয়েছে ভবিষ্যতেও পারবে নাআল কুরআন বলে,তোমরা পারোনি এবং (ভবিষ্যতেও কখনো পারবে না’ (সূরা বাকারা ঃ ২৪)
কুরআন বাজেয়াপ্তকরণ মামলা ঃ ১০ এপ্রিল ১৯৮৫ মাানবেতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়মানুষ অজ্ঞতাবশত কুরআনের বিরোধিতা করতে পারে কিন্তু আল কুরআনকে বাজেয়াপ্ত করার মামলা দায়ের করার ধৃষ্টতা পৃথিবীতে কেউ দেখায়নিসেদিন পৌত্তলিকতার কেন্দ্রবিন্দু ভারতের দুই নাগরিক পদ্মমল চোপড়া ও শিতল সিং আল কুরআনের বিরুদ্ধে ভারতের হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেবিচারপতি পদ্ম খাস্তগীর এই মামলা গ্রহণ করেভারতের সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সি.আর.পি.সি. ১৯৫ (ক) এবং ২৯৩ (ক) বিধান অনুসারে কুরআনকে ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে এই রীট পিটিশন গ্রহণ করা হয় মামলার বিবরণে বাদীরা উল্লেখ করে কুরআনে এমন কিছু আয়াত রয়েছে যা কাফির ও মুসরিকদেরকে হত্যা, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, যুদ্ধ করার প্রেরণা দেয়এই গ্রন্থ (তাদের ভাষায়) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্মদাতাঅতএব এর আরবি কপিসহ অনুবাদসমূহ বাজেয়াপ্ত করা দরকারবিচারপতি এই বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি রুল জারি করেন
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ: হাইর্কোটে এই নির্দেশ পরের দিন পত্রিকায় ছাপা হয়ভারতসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতিবাদ ও বিােভে ফেটে পড়ে১০ মে বায়তুল মোকররম মসজিদের দণি গেইটে প্রায় বিশ হাজার লোকের বিশাল প্রতিবাদ সভা ও মিছিল হয়
রক্তাক্ত ১১ মে : আল কুরআন বাজেয়াপ্তকরণের মামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেসীমান্তবর্তী জেলা চাপাইনবাবগঞ্জের তৌহিদী জনতা প্রতিবাদ বিােভে ফেটে পড়ে এবং ১১ মে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে সভার আয়োজন করেআল কুরআনের অবমাননা সইবে না আর মুসলমানস্লোগানে মুখরিত হয় জনপদনিস্তব্ধ জনপদে কুরাআনের স্পন্দন জেগে উঠেসমাবেশের পূর্ব মুহূর্তে তদানীন্তন সামরিক জান্তা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেকিন্তু শাশ্বত কুরআনের জন্য যে জনতা জেগে ওঠেছে তাদের  দমিয়ে রাখা অসম্ভবতৌহিদী জনতা সামান্য সময়ের জন্য সমবেত হয়ে শুধু প্রার্থনা করার আবেদন জানায়কিন্তু নাস্তিকবাদী ম্যাজিস্ট্রেট প্রার্থনা করার অনুমতিও দেয়নিধর্মপ্রিয় জনতা আল কুরআনের আলো ঘরে ঘরে  জ্বালোস্লোগান দিতে শুরু করেতারা নারায়ে তাকবীর আল্লাহ আকবার স্লোগান দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়আল্লাহর সার্বভৌমত্বে আকাশ বাতাস মুখরিত হলোএমন সময় পাষন্ড  ম্যাজিস্ট্রেট নিষ্ঠুরতার চরম সীমায় উপস্থিত হয় এবং পুলিশকে নির্বিচারে গুলি চালানো নির্দেশ দেয়
যারা শহীদ হলেন: পুলিশের নিমর্ম গুলিতে শীষ মোহাম্মদ, রাশিদুল হক রশিদ, সেলিম, শাহাবুদ্দিন, মুক্তার হোসেন, সবুর সহ আরো অনেকে শাহাদাতবরণ করেনআর আহত হন অসংখ্য মানুষ
আর-কুরআনের চিরন্তনতা:  সেদিন তারা শহীদ হয়ে আল কুরআনের মর্যাদা রায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেনতাদের রক্ত বৃথা যায়নিবাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব থেকে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ হয়ভারতীয় সরকার আল কুরআনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি খারিজ করতে বাধ্য হয়এরপর থেকে বাংলাদেশে ইসলামপ্রিয় জনতার নিকট ১১ মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছেআল কুরআনের স্রষ্টাই আল কুরআনের রক, তাই পৃথিবীর কোনো শক্তি কুরআনের বিন্দু পরিমাণ তিসাধন করতে পারবে না

1 টি মন্তব্য: