শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১১

সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ


সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ


শাহীন আহমদ খান

ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদেরই বসুন্ধরাদ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এই গানের সাথে সুর মিলিয়ে পর্যটক ইবনে বতুতাও বাংলাদেশের রূপে মুগ্ধ না হয়েপারেননি। নদী বিধৌত দেশ যেমন রূপে বিশ্বরানী তেমনি এর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি ঈর্ষান্বিত বিশ্ব শক্তিও।
অপার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক প্রাচুর্য্যরে সাথে দেশের মেধা সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উঠতে পারে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার মহাসড়কে।
সম্ভাবনাময় শিল্প:
বিপুল জনশক্তির এই দেশে দ্রুততার সাথে শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটছে। উন্নত বিশ্বে পাদনের জন্য যেখানে জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে, সেখানেবাংলাদেশের রয়ছে উদ্বৃত্ত বিপুল জনশক্তি। এছাড়াও রয়েছে কাঁচামাল, নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ এবং পাদনোপযগী প্রাকৃতিক পরিবেশ। সম্ভাবনাময়শিল্পখাত গুলো হল- গার্মেন্টস শিল্প, সিরামিক শিল্প, চামড়াজাত শিল্প, জাহাজ শিল্প, প্রকাশনা শিল্প, ঔষধ শিল্প, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স, কৃষিজাতপণ্য মসলা, হিমায়িত খাদ্য দ্রব্য, পাট পাটজাত পণ্য প্রভৃতি।
কৃষি সম্ভাবনা :
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় খাতে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। তাই অধিক খাদ্য পাদনের ল্েয দেশের কৃষিকে শিল্পায়নের আয়তায় নিয়ে আসতেহবে। দেশের কৃষি ভিত্তিক শিল্পের মধ্যে ফলের জুস, ডেইরি, পোল্ট্রি, স্য, ভোজ্য তেল, পাম চাষ, মিঠা পানির রিটা মাছ, মুক্তা চাষ, উপকূলীয় অঞ্চলেশুটকি, আমন চাষ ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পাদন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
উল্লেখ্য যে, কৃষি সম্প্রসারণে বাংলাদেশে উদ্ভাবিত হয়েছে কম্পিউটারের মাধ্যমে উদ্ভিদের রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি।
সম্ভাবনাময় তথ্য প্রযুক্তি :
প্রযুক্তির েেত্র বাংলাদেশ এখন আগের যেকোন সময়ের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে। বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছরহাজারো তথ্য প্রযুক্তিতে জনশক্তি তৈরি হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির েেত্র হার্ডওয়ার, সফটওয়ার, নেটওয়ার্কিং আউট সোর্সিং, ভ্যালু এডেড সার্ভিস, এনিমেশন, থ্রি.ডি. আর্কিটেকচারাল ভিজ্যুয়ালাইজেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, ট্রেনিং সেন্টার, কল সেন্টার, টেলিকমিউনিকেশন, ওয়েব ডিজাইন, ইন্টারনেট সেবা, -ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এফএম রেডিও, অনলাইন রেডিও, অনলাইন টিভি ইত্যাদি খাত তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি খনিজ সম্ভাবনা :
বাংলাদেশের রয়েছে প্রচুর জ্বালানি খনিজ সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি বিদেশি শক্তির লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে বহুকাল থেকে। জ্বালানি খনিজেরবিপুল মজুদের সঠিক উত্তোলন ব্যবহার দেশের উন্নয়নকে আরো তরান্বিত করবে। সে েেত্র বিদ্যুপাদন, কয়লা, গ্যাস, সামুদ্রিক খনিজ সোনাউত্তোলন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প :
পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান সমূহ, ঐতিহাসিক স্থান, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল আধুনিক স্থাপনাসমূহ পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
জনশক্তির সম্ভাবনা :
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষই বাংলাদেশের জনসম্পদে পরিণত হচ্ছে। দেশের জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করে আয় হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা যা আমাদেরঅর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলছে। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন এবং বহুমুখী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিবিধ সম্ভাবনা :
বাংলাদেশ স্থাপত্য অবকাঠামোর উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, নাটক চলচ্চিত্র শিল্প, স্বাস্থ্য শিা ইত্যাদি খাতগুলিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেসম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে।
বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে ৎ, দেশপ্রেমিক নাগরিক প্রয়োজন। তাই আমাদের সকলের উচিসমৃদ্ধবাংলাদেশ গড়তে নিজেদেরকে একজন ৎ, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
লেখক :
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি
মাসিক শিাঙ্গন

কবিতা


দ্বীপ নির্মাণ
ফররুখ আহমদ
প্রবাল দ্বীপের গোড়া পত্তন হবে,
কী করে সে কথা হয়ে গেল জানাজানি !
দল বেধে এল অযুত প্রবাল কীট
কাঁপায়ে দুপাশে দরিয়ার লোনা পানি।
রেখে এল তারা জীবনের সব সাধ,
ফেলে এল তারা জীবনের সব গান,
নব সৃষ্টির পথে চলে উন্মাদ;
ভিত্তিমূলেই জীবন করিতে দান।’’
‘‘কবে দূরচারী পথিক পাখিরা এসে
কাকলি-মুখর দ্বীপে বাঁধবে ঘর,
জাগবে কখন প্রবাল দ্বীপের বুকে
নারিকেল শাখে স্বপ্নের মর্মর
রাখে না খবর, খোঁজ রাখে না তো কেউ,
কেউ কোন দিন সন্ধান নাহি করে,
প্রবাল কীটেরা নিভৃতে গড়ে দ্বীপ
সকল আঁখির; সকলের অগোচরে,
প্রবাল দ্বীপের গোড়াপত্তন হবে
কি করে পেয়েছে তারা সেই হাতছানি !
মৃত্যু যাদের ত্যাগের মহান ছবি
মওতেই তারা পায় সে জিন্দেগানী।’’

প্রবাসীর কলম থেকে...


প্রবাসীর কলম থেকে....
মো: নাজমুল আলম
শিক ৩ঘন্টা ধরে কাশ নিচ্ছেন। লেকচারের সাথে সাথে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্লাইড এবং অন্যান্য তথ্য দিচ্ছেন। আর ছাত্র-ছ্ত্রাীরা প্রত্যেকেই মনযোগদিয়েই লেকচার শুনছে। লেকচার শোনার ফাঁকে ফাঁকেই কেউ কফি কেউ চকলেট খাচ্ছে অথবা কেউ নাস্তা সেরে নিচ্ছে আর শিক তার লেকচার চালিয়ে যাচ্ছেন।অবাক করার মত বিষয়ই বটে। আমরা শুধু কাশরুমে শিকের লেকচার শুনেই অভ্যস্থ, কিন্তু কাশ চলাকালীন সময়ে যে নাস্তাও করা যায় তা প্রথম চাুষকরলাম। এই চিত্রটি ইউরোপের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
সেমিস্টারের শুরুতেই আমাদের কাছে প্রিন্টেড কাশ সিডিউল  দিয়ে দেয়া হল। আগামী মাস কখন কোথায় কাশ কোন শিক কাশ নিবেন, কবে কোথায়  ঊীপঁংংরড়হ, অ্যাসাইনমেন্ট জমা অত:পর ঊীধস থেকে শুরু করে  বংবহঃধঃরড়হ, ঈড়সঢ়ঁঃধষধনবুকিং পরীার স্থান সব বিস্তারিতভাবে দেয়াথাকে সেখানে।
 প্রথম দিন মাসের সিডিউল হাতে পেয়ে ভেবেছিলাম  এত নিখ্্্ুঁত টাইম টেবিল ম্যানেজ করা হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের প্রতিদিন কাশশুরু হত সকাল .১৫মিনিটে। আর শীতকাল শুরু হওয়াতে সূর্য উঠবে সকাল .৪৫ মিনিটে। অনেক চেষ্টা করলেও সময়ের হেরফের তো কিছু না কিছু হবে।কিন্তু আমার ধারনা যে পুরোপুরি ভুল ছিল তা আমি একটু পরেই বুঝতে পেরেছিলাম কারণ সুইডিশরা খুবই সময় সচেতন। সকাল .০০টার মধ্যে নাস্তা সাড়ে১১টা থেকে সাড়ে ১২ টার মধ্যে দুপুরের খাবার এবং .৩০-.০০ মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া এই নিয়ম সকল সুইডিশরা মেনে চলে।  এজন্যইপ্রথম দিকে যখন .২৫ মিনিটে কাশে ঢুকতাম শিক মুচকি হেসে এড়ড়ফ সড়হরহম বলে সম্বোধন করতেন এবং আমি যখন দু: প্রকাশ করতাম দেরীহবার জন্য তখন তিনি আন্তরিক ভাবেই বলতেন  ওঃং ঙশ।
 লেখা পড়া সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার কথা  শিকদের কাছে অনায়াসেই বলা যায়। এবং এখানকার শিকরা সেই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি বোধকরেন না। সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হল শিককে কোন বিষয়ে  প্রশ্ন করা হল , আর তিনি বিষয়টি মনে করতে পারছেন না তখন তিনি দু: প্রকাশ করেসময় নেন। আর যদি বিষয়টি তিনি সঠিকভাবে জানেন না তবে তিনি সরাসরি স্বীকার করেন যে বিষয়টি তিনি জানেন না এবং কার কাছে এই প্রশ্নের উত্তরপাওয়া যাবে তাও বলে দেন। কোন গোঁজামিলের আশ্রয় নেন না। শিকদের সহযোগিতার আরও কিছু উদাহরণ দিই। ড়লবপঃ এর কাজ করার সময় আমির্স খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কোর্স কো-অডিনেটরকে  -সধরষ এর মাধ্যমে জানালে তিনি ডবন ড়ভপরবহপব থেকে কয়েকটি ষরহশপাঠিয়ে দেন আমাকেএবং সময় থাকলে আমাকে দেখা করতে বলেন। আমি দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে পাওয়া যাবে এমন  টা বই আরও কিছু সোর্সেরলিংক এবং তার কাছে থাকা ১টি বইয়ের সন্ধান দেন। আমি দিনের মধ্যে তার ব্যক্তিগত বইটা ফেরদেবার শর্তে বইটা ধার নিলাম। ঋরহধষ ঊীধসএর আগে কিছু কিছু বিষয়ে আমার দুর্বলতার কথা জানালে কোর্স  কো-অডিনেটর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সকল শিককে ব্যক্তিগতভাবে -সধরষ করে আমাকেসাহায্য করার জন্য বলেন। এবং আরেকট্ ি -সধরষ করে আমাকে সবার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। একজন শিক ছুটিতে ছিলেন। তার বিষয়টিকোর্স কো-অডিনেটর নিজে আমাকে সমাধান করে তো দিলেনই উপরন্তু বললেন যে সেই শিক থাকলে হয়তো আমি আরো ভাল করে বুঝতাম। শিকদের এইরকম সহযোগিতায় আমি রীতিমত আবিভত। কারণ আমাদের দেশের শিকরা হন একটু ধফঃরড়হধষ এবং তারা ফর্মালিটি  সধরহঃধরহকরতে পছন্দকরেন। কিন্তু এখানকার শিকরা কোন ফর্মালিটির ধার ধারেন না। প্রথম কাসেই এসেই আমাদের কোর্স কো-অডিনেটর জানালেন তার নাম। তারপরও যখনতাকে স্যার বলে সম্ভোধন করলাম তখন তিনি বললেন আমার বাবা-মা আমার একটা নাম রেখেছে এবং সেই  নামেই যেন তাকে সরাসরি ডাকি। স্যার বলারকোন প্রয়োজন নেই।
  বাংলাদেশে ঋরহধষ বীধস এর আগে ঋড় ঋরষষ সহ বিভিন্ন  ফর্মালিটি সধরহঃধরহকরতে হয়। এতে পরীার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সময় নষ্ট হয়।কিন্তু কোর্স ঋরহধষএর এগে শিক -সধরষকরে জানতে চাইলেন আমি পরীায় অংশ নিতে আগ্রহী হলে তাকে যেন আরেকটা -সধরষ করে জানাই।পরীার হলেও গিয়েও আমি অবাক হই কিছু বিষয় দেখে।যথারীতি সকল  ংঃঁফবহঃ উপস্থিত ঢ়বহপরষ কলম ওউ পধ আর খাবার নিয়ে। পাশেরটেবিলে দেখি এক ছাত্র এক বক্স চকলেট আর কলা নিয়ে বসেছে। লিখছে আর খাচ্ছে। আরেক স্টুডেন্ট কাগজ কলমে না লিখে  ষধঢ়ঃড়ঢ় নিয়ে বসে পরীাদিচ্ছে আসলে মুল ব্যাপার হচ্ছে উন্নত বিশ্বের লেখাপাাড়ার পরীার বিষয়টা হচ্ছে আমি বুঝলাম কিনা আর যা বুঝেছি তা বুঝতে পেরেছি কিনা।
একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই  নয়। তা হচ্ছে ঢ়ষধমরধরংস ঢ়ষধমরধরংস কে সবচেয়ে খারাপ চোখে দেখা হয় এবং এর শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেবহিস্কার সেটা মাস থেকে মাস  বা আরও অধিক হতে পারে। ঢ়ষধমরধরংস অর্থ হচ্ছে অন্যের কোন গবেষণা, কাজ বা তথ্য-উপাত্ত নিজের বলেচালিয়ে দেয়া। যে কোন ছাত্র-ছাত্রীকেই বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট    ড়লবপঃএর কাজ করতে হয়। কাজ করতে যেয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের সাহায্য নিতেহয়। কিন্তু এই কাজগুলো নিদিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হয়। সোর্স উল্লেখ করতে হয় এবং সরাসরি কপি পেস্ট করা নিষেধ্ প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন উন্নতসফটওয়্যার ব্যবহার করে   ঢ়ষধমরধরংস সনাক্ত করার জন্য অনেক ধরনের অনলাইন সফটওয়্যারও বিনামূুল্যে পাওয়া যায়। এজন্যই সকল শিার্থীউদ্ভাবনী কিছু করার জন্য সদা সচেষ্ট থাকে। অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের শিা ব্যবস্থায় অনেক অসমাঞ্জস্যতা রয়েছে। এই বিষয়গুলো এতদিন পরকিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছি। কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আর বর্তমানের কিছু ঘটনাযধ করাই আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। সূদুর প্রবাসসুইডেন) থেকে শিাঙ্গন পরিবারকে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন শুভ কামনা  রইল। (

রাজনীতি


বাংলাদেশে আদর্শিক আন্দোলনের রাজনীতিসাম্প্রতিক ভাবনা
মুহাম্মদ সাকিল উদ্দিন

বিশ্ব মানচিত্রে আয়তনে ছোট হলেও জনসম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদ আর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছেস্বাধীন সার্বভৌম লাল সবুজের পতাকাধারী প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। এটি কোন সাধারণ রাষ্ট্র নয় যে সময়ের পরিবর্তনে স্বাভাবিক জন্মের মাধ্যমে এরপত্তি হয়েছে, এটি বরং একটি অর্জন। কয়েক দফা পরিবর্তনের মাধ্যমে অবশেষে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এর মানচিত্র বদলেছেঅনেকবার, সরকারী দলে আসীন হয়েছে নানা রকমের আদর্শিক রাজনীতি। পরিবর্তন ঘটেছে জন মানুষের চাহিদা চেতনায়। অবিস্মরণীয় আমূলপরিবর্তন ঘটেছে এদেশের মানুষের আাকিদা বিশ্বাসের েেত্র। আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে রাষ্ট্রের জনগণ সরকার।  ল্য সবার একটাই, সমৃদ্ধ স্বনির্ভর উন্নত জাতি গঠন সন্ত্রাস-দূর্নীতি মুক্ত নিরাপদ আতœনির্ভরশীল উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তোলা। সেই সাথে আশাবাদীও হওয়া উচিত যে, আরকোন বিভাজন নয় বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে বসবাসকারী সকল জনগোষ্ঠীই বাংলাদেশের নাগরিক সকলে মিলে মিশে শান্তিতে বসবাস এবং একত্রে দেশ গঠনেঅংশগ্রহণ করে মর্যাদা সম্পন্ন বাংলাদেশী হিসেবে এদেশের মানকে বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠত করা কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদেরকে আজ অবলোকনকরতে হচ্ছে যে কয়েক দফা মানচিত্র, শাসক রাজনীতির পরিবর্তনের ফলেও হানাহানি, দূর্নীতি, দারিদ্র, বেকারত্ব, পরনির্ভর অর্থনীতি, সীমান্তে বাংলাদেশীখুন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, শিা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব, ব্যবসায় সিন্ডিকেট, প্রশাসনে ঘুষ দলীয়করণ, সমাজে ইভটিজিং এসব এখনো প্রতিষ্ঠিত আছে ভূ-খন্ডে। কিন্তু কেন ? প্রাচীন পুন্ডনগর থেকে বাংলা, সম্রাট হুমায়ুনের জান্নাতাবাদ, এরপর পূর্ববঙ্গ  থেকে পূর্ব-পাকিস্থান পরিশেষে স্বাধীন সার্বভৌমবাংলাদেশ। মানচিত্র, পতাকা, শাসক রাজনীতির এতো পরিবর্তনও কেন মানুষের দেশের ভাগ্য বদলাতে পারেনি। কারণ-
 এক. স্বাধীন হয়েও পরাধীনের মতো  অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিকভাবেও বিদেশের প্রতি নতজানু নীতির পরিবর্তন হয়নি। 
দুই.এদেশের শাসকগণ এদেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেনি। মতায় টিকে থাকার জন্য যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা করেননি।
তিন. দেশ পরিচালনার মূলনীতি সংবিধান, জনগণের আকিদা বিশ্বাসের প্রতিফলনে রচিত হয়নি।
চার. সর্বত্র দলীয়করণ, দূর্নীতি সন্ত্রাসে শাসক গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত দলীয়ভাবে অংশ গ্রহণ বন্ধ হয়নি।
পাঁচ. গণতান্ত্রিক চর্চা বন্ধ করে বিরোধীদলকে দমননীতি রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছয়. শাসক গোষ্ঠীর অবৈধ আশ্রয়-প্রশ্রয়ে প্রশাসনের আমলাগণ জনসেবার পরিবর্তে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটে নিচ্ছেন।
সাত. রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতি নৈতিকতার শিা প্রদানে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপরোক্ত মৌলিক কারণ ছাড়াও হাজারো কারণ রয়েছে যা উল্লেখেরঅবকাশ এখানে নেই।
তাহলে এত পরিবর্তনের পরও মৌলিক আচরণ নীতির পরিবর্তন কেন হলো না, এটা খুঁজে দেখা আজ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।  প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে যারা যুগে যুগে শাসন করেছেন তারা বিভিন্ন মতাদর্শিক আন্দোলনের শাসক ছিলেন। শাসনকার্যে সেসব মতাদর্শের প্রতিফলনও ঘটিয়েছেন।কিন্তু তবুও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়নি, সমৃদ্ধ উন্নত দেশ গঠন করা যায়নি। পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের নজির সৃষ্টি করা যায়নি। এর কারণওআজ খুঁজে দেখার সময় এসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্থান পতন আছেই। তাই বলে কি বিপরীত মতাদর্শের দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা কোন গণতান্ত্রিক নীতিহতে পারে ? যে কাররই কোন আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। আজ বাংলাদেশের ৯০% মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী যেখানে বাঙালী ধর্মনিরপে রাজনীতিও চলছে, এমনকি বিভিন্ন সময়ে মতায়ও আসীন হচ্ছে, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিও চলছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে তারাই বেশির ভাগসময় রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে, আবার ধর্ম অস্বীকারকারী পাশ্চাত্য নাস্তিকদের তত্ত্ব নিয়ে মাঠে বাম রাজনীতির আস্ফালন কম নয়, ধর্মনিরপেতার কাঁধে উঠে তথাকথিত মুক্তবুদ্ধি প্রগতির নৌকায় চড়ে মতায়ও আসীন হয়েছেন তাদের / জন। অপরদিকে, মূলজ্ঞান ওহীর বিধানকায়েমের চেষ্টাকারী ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য। তাদেরও কোন অংশের কোন এক সময় মতার অংশীদার(ুদ্রভাবেহলেও) হওয়ার সুযোগ হয়েছিল নাম মাত্র। এখানে বাংলাদেশ অধ্যায়ে শাসকগোষ্ঠীর আচরণ, কর্ম, চিন্তা, কৌশল, পররাষ্ট্রনীতি, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন পরিকল্পনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইতিহাসে এদের কেউ অন্য দল নিষিদ্ধ করে সংবাদপত্রের কন্ঠ রোধ করে দেশকে নিজের পরিবারের সম্পদ বানিয়েহয়েছেন এক নায়ক কেউ মতা গ্রহণের জন্য জনমত গ্রহণ না করে বিশেষ বাহিনী ব্যবহার করেছিলেন। আবার কেউ প্রতরাণা হঠকারিতার মাধ্যমে ক্যুকরে মতায় এসে গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গণদাবীর মুখে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রায় কেউ মতার মসনদ ছাড়তে অনীহা দেখিয়েকারচুপির ভোট গ্রহণ করার চেষ্টা করেছেন। আবার কারো েেত্র দেখা গেছে দূর্নীতির চ্যাম্পিয়ন ট্রফি বাংলাদেশে এনে কয়েকবার রাখার কৃতিত্ব অর্জনেরপাশাপাশি, দলীয়করণ,সন্ত্রাস, ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন, নিজ দেশের সন্ত্রাসী দেশদ্রোহী অপশক্তির সাথে নির্লজ্জ আপোষ করে কালোচুক্তির মাধ্যমে দেশেরএকদশমাংশ পার্বত্য এলাকা বাংলাদেশের ভূ-খন্ড থেকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে প্রভু রাষ্ট্রের সাথে সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তিকরে পরাধীনতার গ্লানি গ্রহণের চেষ্টাও করেছেন মহাসমারোহে। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও কি বিগত সরকার গুল মধ্যে আলোর ঝলকানির মতো কোনআশার প্রতীক আলোক রশ্মির দেখা মেলেনি ? বিবেককে নীতি ন্যায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেখা যায় না কি ? বিরোধী মতাদর্শের পত্রিকা চ্যানেল অণুবীণ যন্ত্র দিয়ে কোন এক সরকারের কোন কোন মন্ত্রীর টাকার দূর্নীতিও খুঁজে পাননি তাহলে কি তাঁরা দূর্নীতি করতে জানতেন না ? নাকিটাকা চিনতেন না ? কি এমন কারণ ঘটেছে তাদের বেলায় ? চারদিকে যখন নিজেদের সম্পদ তৈরির জন্য দেশের কর্ণধারগণ ব্যস্ত, বিদেশী ব্যাংকে দেশী অর্থপাচার করে আন্তর্জাতিক ধনী হওয়ার প্রস্তুতি, সে সময়ও এই মন্ত্রীগণ কি নিজেদের উন্নতির কথা ভুলে গিয়েছিলেন ? কোন নেশায় বিভোর ছিলেন তাঁরা এটাওআজ খুঁজে দেখা জরুরী
বিজ্ঞ পাঠকের সচেতন বিবেকের কাছে আজ পর্যালোচনার জন্য বিনীত অনুরোধ, উপরোক্ত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে নিজের করণীয় ঠিক করারসময় এসেছে এখনই।
মিডিয়া নির্ভর বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর মদদে আজ যারা নীতি নৈতিকতার সমন্বয়ে গড়ে উঠা মহান আল্লাহর ওহীর বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনারপ্রচেষ্টারত ইসলামী রাজনৈতিক দল গুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, তাদের সম্পর্কে সচেতন সজাগ থাকার সময় এসেছে। দেশ পরিচালনায় তারা সম্পূর্ণরূপেব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছরেও  তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি, দেশের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে কিছুই করতে পারেনি।  উন্নত জাতি গঠনে কোনভূমিকাই রাখতে পারেনি। দারিদ্র বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারেনি, দূর্নীতি, সন্ত্রাস থেকে জনগণকে নিরাপদ করতে পারেনি। নৈতিকতা সমৃদ্ধ শিা দিয়েনতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। সর্বত্র চরমভাবে ব্যর্থ এসব মতাদর্শিক দলগুলো পেরেছে শুধু জনগণকে ঠকিয়ে ধোঁকা দিয়ে বিদেশী প্রভুদের সহায়তায়মতা গ্রহণ করতে।  তাই আল্লাহর সৃষ্টি মানুষকে আজ চিন্তা করতে হবে। সৃষ্টিজগতের মালিক আল্লাহ তায়ালার নিয়ম অনুযায়ী তাঁর সৃষ্টিকে পরিচালিতকরতে হবে। এজন্য ওহীর বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার কোন বিকল্প পথ আর আজ সামনে নেই। এসব বললে এক শ্রেণীর টাক বুুদ্ধিজীবির মাথা ঘেমেউঠে, হায় হায় দেশ গেলো, মৌলবাদী এলো এসব জিকির তুলে রাজনীতি মিডিয়া অঙ্গন সরগরম করে তোলে। কোরআন সুন্নাহর আইনের কথা শুনলেই জঙ্গীমৌলবাদী বলে চিকার করে।  স্বাধীনতার সময় দেশের অখন্ডত্ব চাওয়াকে অপরাধী গণ্য করে তাদের গাড়ীতে বাংলাদেশের পতাকা দেখলে তাদের ঘুম হারামহয়ে যায়।
এসব জ্ঞান পাপীদের কাছে আমার প্রশ্ন-
. মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করা যদি অপরাধ হয় তাহলে কার্ল মার্কস, লেলিন, চেঁ গুয়েবারা এদের আদর্শ নিয়ে ৯০% মুসলমানদের দেশেকিভাবে রাজনীতি করা যায়?             
. ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করাকে আরবীতে জেহাদ বলা হয়। এজন্য জিহাদী বই আটক এবং জেহাদ শব্দের ভীতি ছড়ানো হয়, কিন্তু বামদল গুলোরবিপ্লব ভিত্তিক বইগুলোকে কেন বিপ্লবী বই বলে আটক করা হয় না?
. স্বাধীনতা বিরোধী ছিল বলে কারো গাড়ীতে যদি বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো কলিজায় যন্ত্রণা সৃষ্টি করে, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারবিরোধীতাকারী রবীন্দ্রনাথের রচনা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়ানো হয় ?
. ইসলামের নামধারী জঙ্গিদের যেভাবে পাকড়াও করা হয়, দেশের দণি পশ্চিমাঞ্চলে প্রশিণ প্রাপ্ত বাম রাজনীতির পতাকাধারী চরমপন্থীদের দমনে কি তেমনপাকড়াও বা পরিকল্পনা কেউ গ্রহণ করেছে?
. মুসলিম প্রধান দেশে দাঁড়ি থাকলে ডিফেন্স বি.সি.এস. চাকুরী হয় না কেন? দাঁড়ি রাখা কি পুরুষের অপরাধ?
এসব কোন প্রশ্নেরই উত্তর এসব অসচিন্তাশীল বিদেশী দালালী করে চুৃল উঠা বুদ্ধিজীবিদের পে কোন দিনই সম্ভব নয়। এদের কারো কারো চরিত্রতসলিমা নাসরিন একবার প্রকাশও করে দিয়েছিলেন। যা দৈনিক মানবজমিন জমিন পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ছাপা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী নামধারী এসবদেশদ্রোহীরাই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রগতির নামে লিভটুগেদার এর চর্চা করে, দিনে দেশ দেশ বলে চিকার করে এবং রাতে নর্তকী নিয়ে নেচে গেয়ে বাংলামদ খায়। দিনে সেমিনারে সুশাসনের বক্তৃতা করে, রাতে মোটা অংকের কোচ গ্রহণের জন্য ঘুম হারাম করে জেগে থাকে। দাতা সংস্থার সাহায্যগুলোগলধ:করণ করে। পরিশেষে তারা গুলশান বারিধারায় আশ্রয় খুঁজে ফেরে।
তাই আজ এটা প্রমাণিত সত্য যে, নীতি নৈতিকতা ছাড়া উন্নত জাতি সমৃদ্ধ দেশ গঠন সম্ভব নয়, যা ইসলামী জ্ঞানহীন ব্যক্তি আদর্শিক দলের কার্যক্রমথেকে সহজেই প্রতীয়মান। এজন্য চিরমুক্তি শান্তির ল্েয প্রকৃত মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আর্দশেই ফিরে আসতে হবে এবং প্রকৃত শান্তিদাতা মহানআল্লাহর ওহীর বিধানই দেশ পরিচারনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে এভাবেই শাসক বদলাবে, সরকার বদলাবে, আদর্শবদলাবে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন,কোন দিনই হবে না এবং দেশের উন্নয়নও  সম্ভব নয়। এজন্য ওহীর বিধান প্রতিষ্ঠা করা আজ সময়ের দাবী।মহান আল্লাহ তায়ালা সেই জ্ঞান বোধ সকলকে দান করুন। আমীন।
# লেখক গবেষক