শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১১

বিজ্ঞান জগৎ

কোরআন ও বিজ্ঞান ঃ
সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি
আবু সালেহ


মহান প্রভূ তাঁর সৃষ্টি জগতকে বহুরূপে নান্দনিক সৌন্দর্যে সুশোভিত করেছেন। ভেবে দেখুন, এই পৃথিবীতে সব কিছু থাকার পরও যদি শুধুমাত্র কোন প্রকার ফুল-কলি না থাকত তবে পৃথিবীটা কেমন লাগত। আবার সকল প্রকার কুসুম কলি থাকলেও যদি এর কোন প্রকার সুঘ্রাণ না থাকত তবে সুবাসহীন পৃথিবীটা কেমন উদ্ভট লাগত। ধরি এগুলো সব থাকত কিন্তু পৃথিবীতে থাকত না কোন প্রকার পাখ-পাখালি আর তাদের মিষ্টি সুরের কল- কাকলী, তবে পৃথিবীটা যে কত ভয়ানক নীরস লাগত। অন্যথায় পৃথিবীটা যদি এমন হতো যে, কারো কোন প্রকার সঙ্গী বা সঙ্গিনী না থাকত শুধুমাত্র বিভিন্ন শ্রেণীর উভয়লিঙ্গিক প্রাণী থাকত যারা পৃথিবীতে বংশ বৃদ্ধি করত। তখন এই পৃথিবীটা কত যে প্রেমহীন ও ভাবলেশহীন নিরামিষ মনে হত। কিন্তু না মহাবিশ্বের পরম প্রতিপালক যে অসীম উন্নত দৃষ্টিভঙ্গির ও রোমান্টিক সৃষ্টি কৌশলের মহান কারিগর । তাই তো তিনি সৃষ্টি জগতে সবকিছু করেছেন জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি। আর তা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় ঘোষণা করেছেন এভাবে
“আর প্রত্যেক বস্তু আমি সৃষ্টি করিয়াছি জোড়ায় জোড়ায় যাহাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” (সুরা যারিয়াত, আয়াত-৪৯)
“পবিত্র মহান তিনি যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং উহারা যাহাদিগকে জানেনা, তাহাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করিয়াছেন জোড়া জোড়া করিয়া।” (সুরা ইয়াসিন-৩৬)
“আমি সৃষ্টি করিয়াছি তোমাদিগকে জোড়ায় জোড়ায়। ” (সুরা নাবা-৭৮ঃ আয়াত-৮)
“আর যিনি সকল প্রকারের জোড়া যুগল সৃষ্টি করেন।” (সুরা যুখরুফ ৪৩ ঃ আয়াত ১২)
উপরের আয়াতে যুগল বা জোড়া বুঝাতে ঝা, ওয়াও, জিম এই হরফ তিনটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ শব্দটি ঝাওজুন। ঝাওজুন শব্দটি দ্বারা শুধু জোড়াই নয় বরং স্বামী-স্ত্রীও বুঝায়। আবার সব কিছু জোড়ায় জোড়ায় বলতে জড় এবং জীব কিছুই বাদ পড়েনা। জীব বা প্রাণীকে না হয় বোঝা গেল জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। কারণ উদ্ভিদও স্ত্রীলিঙ্গ এবং পুংলিঙ্গ হয়। তাছাড়া একই গাছের রেনুও দুই লিঙ্গের যা বাতাস, কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও পশু পাখি দ্বারা স্থানচ্যুত হয়ে গর্ভধারণ করে। প্রশ্ন হচ্ছে জড় পদার্থের তো কোন ছেলে মেয়ে বা বংশবৃদ্ধি নেই। তবে কীভাবে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি হল এসব? তাহলে কী কোরআনের বাণীতে অসঙ্গতি আছে? নাউযুবিল্লাহ বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে আপনারা জানেন প্রতিটি পদার্থই ুদ্রাতিুদ্র পরমাণু দিয়ে গঠিত। একটি পরমানুর ভিতরে আছে ইলেকট্রন প্রোটন ও নিউট্রন। এখানে ইলেক্ট্রন নেগেটিভ চার্জযুক্ত এবং প্রোটন পজেটিভ চার্জযুক্ত। আর নিউট্রন চার্জ নিরপে বলে জোড়া গঠনে অংশ গ্রহণ না করে পরমানুর কেন্দ্রে বা নিউকিয়াস গঠন কর। তাই এখানে ঋনাতœক চার্জের প্রোটনের সাথে যুগলবদ্ধ হয়ে জোড়া পরমাণু গঠন করে। আবার দেখা যায় প্রতিটি পরমানুতেই ইলেক্ট্রন ও প্রোটন সংখ্যা সমান। সুতরাং নিশ্চয়ই পরমাণুও জোড়ায় জোড়ায় ইলেক্ট্রন ও প্রোটন নিয়ে গঠিত। এখানেই শেষ নয় এখন পরমাণুর মধ্যেও আবিষ্কার হয়েছে কোয়ার্ক ও এন্টিকোয়ার্ক, ডয়টেরন ও এন্টিডয়টেরন। এগুলো থাকে পরমানুর মধ্যে জোড়ায় জোড়ায় বিপরীত লিঙ্গ। আলহামদুলিল্লাহ্ “আল্লাহর বাণীর কোনই পরিবর্তন নাই। উহাই মহাসাফল্য।” (১০ঃ ৬৪)
“এরূপ আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন বিশদ ভাবে বর্ণনাকরি।” (৭ঃ৩২)
বস্তুতপে সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ মর্র্র্যাদার আসনে রয়েছে মানবজাতি, মানবজাতির সামাজিক বন্ধন এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসার বন্ধনও খুব সুদৃঢ়। তাই যুগল অন্ত:বর্তী আকর্ষণও মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক। পৃথিবী সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে অদ্যবধি প্রতিটি প্রাণের চরম ও পরম আকর্ষন তার বিপরীত লিঙ্গ তথা সঙ্গী বা সঙ্গীনিকে পাওয়া। আর একে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় জীবন ইতিহাসে কত গল্প কত কাহিনী কত ত্যাগ-তিতিা আর কতনা সংগ্রাম ও সাধনা। যেখানে থাকে একে অপরের প্রতি গভীর প্রেম ভালবাসার এক স্পষ্ট নিদর্শন। যে প্রবৃত্তি মানুষের জন্মগত ও সহজাত। আর এই প্রেম মূলত খোদার প্রেমের গভীরতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। মানুষ তথা সৃষ্টি জগতের মধ্যে মহান প্রতিপালক তাঁর সমগ্র ভালবাসার একশতভাগের একভাগ মাত্র দান করেছেন। এই একভাগ ভালবাসার টান যে কত প্রবল কত প্রখর আর যেই স্রষ্টার কাছে রয়েছে আরো নিরানব্বই গুন বেশী ভালবাসা সেই স্রষ্টা না জানি তার সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাতকে কত বেশী ভালবাসেন। সুতরাং আমাদের সকলের ভালবাসার কেন্দ্রবিন্দু হউক ভালবাসার মহাসাগর রহমানুর রাহিমকে ভালবেসে খুশি করার মধ্যে।
##

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন