পলাশীর চেতনায় দেশপ্রেমে
উদ্বুদ্ধ হতে হবে
মু. দাইয়ান সালেহীন
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন উপমহাদেশ তথা মুসলমানদের স্বাধীনতা হরণের একটি দিন। সেদিন বাংলার সূর্য প্রায় ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়েছিল সেইঐতিহাসিক পলাশীর আম্রকাননে এর পরে শুধুই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইতিহাস বারবার মলিন হয়েছে এক শ্রেণীরস্বার্থপর তাবেদার এবং বিশ্বাসঘাতক পশুদের দ্বারা। পাকিস্তান বিভাগ পরবর্তী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর দালালরা এদেশের মাটিকেবারবার কলংকিত করেছে। শেখ মুজিব, এরশাদ, শেখ হাসিনা এদেরই উত্তরসূরী। সেদিন যদি মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা না করতো তাহলে বাংলার ইতিহাসহয়তো অন্যভাবে লেখা হত। ’৭১ পরবর্তী শেখ মুজিব যদি বিশ্বাসভঙ্গ করে ভারতের তাবেদারীতে লিপ্ত না হত তবে আজকে বাংলাদেশের চেহারা হয়তোঅন্যরকম হতে পারত। ঠিক তেমনি বর্তমান সরকার যদি তার অগ্রজদের ন্যায় দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হত তাহলে ভবিষ্যত বাংলাদেশের স্বপ্নঅন্যভাবেও দেখা যেত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ষড়যন্ত্রকারীদের পরিকল্পনা ও চরিত্রের এক অভূতপূর্ব মিল, তাদের কর্মপদ্ধতিগত অভিন্নতাপলাশীর আম্রকাননে অস্তমিত সূর্যকে আজও উদিত হতে দেয়নি। ইংরেজদের সাথে মীর জাফরের চুক্তি, ইন্দ্রিরা গান্ধির সাথে শেখ মুজিবের চুক্তি এবং সর্বশেষমনমোহনের সাথে শেখ হাসিনার চুক্তি (দেশ বিক্রি) তারই সত্যতার স্যা বহন করে।
নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে জগৎশেঠ, রাজবল্লবদের নেতৃত্বে সুবে বাংলার হিন্দু প্রধানেরা এবং রবার্ট কাইবের নেতৃত্বে বিদেশী বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীমীর জাফরকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারই পরিণামে সংঘটিত হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধ। ষড়যন্ত্র ছিল ভিতরে ভিতরে, বাইরে ছিল নবান সিরাজেরঅত্যাচার অবিচার (?) থেকে সুবে বাংলার মুক্তির বুলি। বলাবাহুল্য, ওই তথাকথিত মুক্তির জন্য ইংরেজ বেনিয়াদের সঙ্গে মীরজাফরের চুক্তিও হয়েছিল। ওইচুক্তির মধ্যে লেনদেনের কথাও ছিল। এটা ১৯৫৭ সালের কথা। এই চুক্তির ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালে এই বাংলায় আর একটি যুদ্ধ হয়েছিল ব্যাপারটাসবারই জানা। পাকিস্তানীদের অত্যাচার অবিচার থেকে এদেশের মানুষদের মুক্তি দেয়ার জন্য সংগঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইংরেজ বেনিয়াদের স্থানেছিল ভারতে বেনিয়ারা আর মুক্তিযুদ্ধের নেতা ছিলেন শেখ মজিবুর রহমান। এটা আর বলার অপো রাখেনা যে , ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করেও চুক্তিহয়েছিল ভারত সরকারের সাথে আওয়ামী নেতৃবৃন্দের এবং এসব চুক্তিতেও নানা কথার আড়ালে লেনদেন এর ব্যাপারও ছিল। ১৭৫৭ সালের লেনদেন এতইবিপুল পরিমান ছিল যে, তার মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সুবে বাংলায় এসেছিল ‘ছিয়াত্তরের মনন্তর’ যাতে বাংলার এক তৃতীয়াংশ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। আবার ১৯৭১ সালে লেনদেনও এত ভয়ঙ্কর ও ব্যাপক ছিল যে তার ফলে বাংলায় এসেছিল দূর্ভি যা এদেশে সত্তরের দূর্ভি নামে পরিচিত। এই মহামন্বন্তরেকলা পাতার কাফন পরিয়ে মানুষের লাশ দাফন করতে হয়েছিল। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের দেশ বিরোধী চুক্তির তুলনাকরা যেতে পারে। শেখ হাসিনা মতায় আসার পিছনে ভারতের সাথে চুক্তি ছিল এবং এখানেও লেনদেন এর সংশ্লিষ্টতা ছিল যার পরিণতি বিগত দুটি চুক্তিরচেয়েও মারাত্বক। ভারতের দাবি ছিল শেখ হাসিনাকে মতায় বসাতে পারলে ট্রানজিট, সমুদ্র বন্দর প্রভৃতি ব্যবহার করার সুযোগ দিতে হবে, ফারাক্কার মতআরও কয়েক ডজন বাঁধ তৈরী করে বাংলাদেশকে মরুকরণ করার সুযোগ দিতে হবে, প্রতিপ বাহিনীর ভিতর বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের প্রতিরা ব্যবস্থা দূর্বলকরার সুযোগ দিতে হবে, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে বাংলাদেশকে আবদ্ধ করার সুযোগ দিতে হবে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যদিও তা বাংলাদেশে পাওয়াযায় তথাপি ভারত থেকে আমদানী করে দেশীয় পন্যের বাজার নষ্ট করে ভারতকে একচেটিয়া মনোপলি অর্জনের সুযোগ দিতে হবে, বিগত জোট সরকারেরআমলে ভারতের সেকুলার স্বার্থে যে প্রভূত তি সাধিত হয়েছে ধর্মবিরোধী শিানীতি ও বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে তার তিপূরণ আদায় করা হবে, এবংসর্বপরি বাংলাদেশকে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে হবে। মীর জাফর যেমন নবাবের তথাকথিত অত্যাচার থেকেদেশকে মুক্ত করার নামে আপামর জনতার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। শেখ মুজিব যেমন স্বাধীনতার নামে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে বাকশাল কায়েমকরেছিল, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও তথাকথিত যুদ্ধপরাধী বিচারের ছদ্মাবরণে মানবতা বিরোধীদের বিচার করার নামে জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করে আবালবৃদ্ধ জনতার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতায় লিপ্ত। আর এ কারণেই ছিয়াত্তরের মন্বন্তর আর সত্তরের দুভির্রে ন্যায় আরো একটি অশনি সংকেত হয়তো আমাদের জন্যঅপো করছে। পাঠকদের জ্ঞানার্থে ও বিশ্লেষণ সুবিধার্থে অনুরোধ করতে চাই ইতিহাস থেকে মীরজাফর ও মুজিবের কৃত চুক্তিদ্বয় পড়ে নিয়ে নিরপে দৃষ্টিতেবিশ্লেষণ করবেন। কারণ আমরা আজ এমন এক প্রান্তিক বিন্দুতে এসে উপনীত হয়েছি যে নিজেদের স্বাধীনতা রা করা
সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অন্যথায় আমাদের অস্তিত্ব হবে বিপন্ন, আমরা হারিয়ে যাব অবলুপ্তির অতল গহ্বরে। বস্তুতই মনে রাখা আবশ্যক যে স্বধীনতাআল্লাহপাকের একটা অত্যন্ত বড় নিয়ামত। অথচ আল্লাহপাকের কথা ভুলে গিয়ে আমরা এই নেয়ামতের কদর তো করছিই না, বরং পদে পদে শুধু অমর্যাদাকরছি। এই রকমের না শোকরি আল্লাহ বেশি দিন পছন্দ করবেন না। আর এজন্যই অবস্থা আজ এমন কুৎসিত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস, অপহরণ,চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অশ্লীলতা , উৎকোচ, কালোবাজারী, দলীয় ক্যাডারদের অর্থদন্ড ,এসব নিয়ে বাংলাদেশ এখন দূর্নীতির শীর্ষে অবস্থানকারী একটি জ্বলন্ত জাহান্নাম। মানুষের মধ্য থেকে বিশেষ করে নেতা-নেত্রীদের মধ্য থেকে আখিরাতের ভয় , দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি দায়িত্ব বোধ বিলুপ্ত হয়েযখন মসনদপ্রীতি ও ধনলিপ্সা একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন এই লোভী ও দায়িত্ব হীন মানুষের দ্বারা শাসিত, পরিচালিত দেশ ও সমাজ কখনো শান্তিরজনপদ হতে পারেনা। এ রকম দেশ ও সমাজে আল্লাহ সার্বণিক ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার লেবাস পরিয়ে দেন। অভিশপ্ত মীরজাফর এবং তার উত্তরসূরীরা যখনস্বদেশ ভূমির প্রকৃত গলক ও নিয়ন্ত্রক তখন আল্লাহ তার বরকতের সকল দ্বার এখানে বন্ধ করে দিলে সেটা অস্বাভাবিক হবে না। কারণ অনাহার কিষ্ট মানুষেরসংগে তামাসা করার জন্য স্বধীনতা অর্জিত হয় নি। সন্দেহ নেই সকল নেতা নেত্রীসহ আপামর জনগণ আমরা সবাই দেশকে ভালবাসি এবং দেশের স্বাধীনতকেভালবাসি। কিন্তু ভালবাসাই সব নয়। ভালবাসা যদি আত্মস্বার্থের পোষকতা বাণিজ্য পণ্য আর মীর জাফরের মত বিশ্বাস ঘাতকতার নামান্তর হয় তবে সেটাকেবর্জন করাই শ্রেয়। আমাদের অন্তত এতটুকু বোঝা উচিত দেশের উন্নতি মানে হাইরাইজিং বিল্ডিং কিংবা ফাইওভার নয়, রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ, কিছু ভিআইপিগমনাগমনের সড়ক নয় আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করে কিছু মানুষের ঘৃত সেবনের ব্যবস্থা করা নয়, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েপ্রতিবেশীদেরকে উদার হাতে সবকিছু বিলিয়ে দেয়া নয়- এসব কিছুই নির্মম তামাশা। আমাদের হারানো স্বধীনতার সূর্যকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয় কিংবাআমাদের দেশপ্রেমকে যদি অর্থবহ করতে হয় তাহলে দেশ বিদেশের কুলকানি ঋতুপর্নাদের শাহরুখদের নৃত্যগীতের আসর সাজানো নয়, কতিপয় কুহকতাড়িতবুদ্ধিজীবীদের মনরা করা নয়, আমাদের উচিত হবে দেশের নব্বই ভাগ তাওহিদী মানুষের আকাঙ্খা ও হৃদয়স্পন্দনকে অনুভব করা, জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করেএমন বিচার সম্পন্ন না করে ুধিত জঠরে যারা কাজ করে তাদের পাশে দাঁড়ানো। শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যাপী মীর জাফর ঘষেটিদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশনামক এই হাড্ডিসার কামধেনুনি আর পারছে না। দুধ নয়, দেশের দশ শতাংশ বুদ্ধিজীবী নামের পরজীবীদের দোহনে এই হতবাগা দুদেল গাভীর বাট থেকেএখন শুধু রক্ত রিত হচ্ছে। মুজিব পতনের মধ্য দিয়ে নদীর পানি উজানে বইলেও জাতীয় চেতনার উত্থান পুরোপুরি হয়নি, পুরানো পাকে আবর্তিত হচ্ছে দেশ।তাই দেশ প্রেমিক জনতার সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে তীতুমিরের বাঁশের কেল্লা থেকে আরও একবার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে।
লেখক: শিার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন