শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১১

ক্যাম্পাস



জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা
সৈয়দ আল জাবের আহমেদ

বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার গৌরব ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সূদীর্ঘ ১৪২ বছর ধরে জ্ঞানের জ্যোতি বিকিরণকরে চলছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রবীন বিশ্ববিদ্যালয়টি। চাতকের মত তৃষিত জ্ঞান পিপাষু মেধাবী শিার্থীদের দীপ্ত পদভারে মুখরিত শিাঙ্গনটি।থিকথিকে অন্ধকার দূরকরণে আলোর মশাল হাতে নিয়ে ছুটছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আলোকিত বিকশিত সমাজ গঠনে স্বার রেখে যাচ্ছে। জাতীয় রাজনীতিরপ্রবল প্রভাবকের ভূমিকা রেখে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক, স্বাধীনতা যুদ্ধের নাম না জানা অসংখ্য শহীদ স্বৈরাচার বিরোধীআন্দোলনের শহীদ মোজ্জাম্মেল হক ইসলামী শাসন কায়েমের স্বপ্নরাজ সৈনিক মর্দে মুজাহিদ শহীদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সালের সুরোভিত পদধুলিতে গৌরবান্বিত বিশ্ববিদ্যালয়। সৃজনশীল মননশীল মেধাবীদের শীর্ষতম পছন্দের বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
পেছন পানে চেয়ে দেখিঃ- ১৪২ বছর পূর্বে জগন্নাথ স্কুল নামে ১৮৬৮ সালে এর পথ চলা শুরু হয়। এর পর ১৮৮৪ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ নামে এররূপান্তর ঘটে। উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান কলেজে পরিণত হয় ঢাকা জগন্নাথ কলেজ। ১৮৮৭ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে স্কুল শাখা পৃথক হয়ে যায়। ১৯২০সালে ওহফরধহ ষবমরংষধঃরাব পড়ঁহপরষ ঔধমধহহধঃয পড়ষষবমব ধপঃআইন পাশ করে নথিভূক্ত করে। ১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  প্রতিষ্ঠাউপলে ট্রামিষ্ট্র বোর্ডের অবসান ঘটে। এবং ১৬, ১৯২০ এর আওতায় জগন্নাথ কলেজের সমস্ত সম্পত্তি দায় দেনার ভার স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে শিার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ নামেপ্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে পুনরায় স্নাতক পাঠ্যক্রম চালু হয়। ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি করা হয়। ১৯৭৫ সালে এখানে সম্মান স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু হয়। পরে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৮২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্র্তি বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে১৯৯১-৯২ শিাবর্ষ থেকে সরকারি জগন্নাথ কলেজের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষেজাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ২০০৫ সালের ২৮নং আইনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সরকারি জগন্নাথ কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয় এবং ২০০৫সালের ২০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বর্তমান অবস্থাঃ- বিশ্ববিদ্যালয়টি  ১১.১১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। চারটি অনুষদের মাধ্যমে আটাশটি  বিভাগে ২৪,০০০ হাজার শিার্থী অধ্যয়নরত।চারশতাধিক শিক পাঠদানে নিয়োজিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোঃ- একটি প্রশাসনিক ভবন। দুইতলা বিশিষ্ট ব্রিটিশ  আমলে নির্মিত ভবনটি ঢাকা মহানগরের ১৯৩ টি দর্শনীয় স্থাপনার একটি।এখানে ভিসি কার্যালয়, কোষাধ্য কার্যালয়, রেজিস্টার প্রক্টর অফিস এবং গণসংযোগ অফিস রয়েছে। চারটি অনুষদের রয়েছে পৃথক পৃথক  টি ভবন।সংস্কৃতি চর্চার জন্য অবকাশ ভবন নামে একটি পৃথক ভবন রয়েছে।
যে সব বিষয়ে পাঠদান করা হয়ঃ
 বিজ্ঞান অনুষদ:- পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, প্রাণীবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানপরিসংখ্যান, গণিত , ভূগোল পরিবেশ, মনোবিজ্ঞান, ফার্মেসী, মাইক্রোবায়োলজি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
ব্যবসায় শিা অনুষদঃ অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশনসিস্টেম, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ফিন্যান্স ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগ।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদঃ- রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, নৃ-বিজ্ঞান, এবং গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ।
কলা অনুষদবাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন আইন বিভাগ। উপরোক্ত চারটি অনুষদে আঠাশটিবিভাগে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ,৬৩৫টি।
যা কিছু আছেঃ  শিার্থীদের জন্য একটি সম্দ্ধৃ লাইব্রেরী রয়েছে। মেডিকেল সেন্টার আছে, সাংবাদিক সমিতি, সাইবার সেন্টার, আধুনিক শীততাপ নিয়ন্ত্রিতমিলনায়তন, আছে সৌর বিদ্যুগবেষণা কেন্দ্র, বিএন সিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার ইউনিট, বাঁধন ইউনিট, টি খেলার মাঠ (ধোপ খোলা) ছাত্রীদের কমনরুম একটি জামে মসজিদ। তবে যা কিছু আছে তার সবই প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপর্যাপ্ত অপ্রতুল।
পরিবহন ব্যবস্থাঃ- ২৪ হাজার শিার্থীর জন্য মাত্র ৯০০ আসনের ১০টি বাস রয়েছে। শিার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে পরিবহন সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েআসছে কর্তৃপ আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আবাসিক সুবিধা না থাকায় পরিবহনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপরেটনক নড়বে কিএমন জিজ্ঞাসা শিার্থীদের। শিকদের জন্য টি বাস দুইটি মাইক্রো বাস আছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল
আবাসিক সুবিধা নেইঃ- এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন আবাসিক সুবিধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ টি হল বেদখল হয়ে আছে ১৯৮৬ সাল থেকে। প্রশাসন বলছেসরকারের সহযোগিতা ছাড়া বেদখল হল উদ্ধার সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিার্থীদের  বারবার আন্দোলনও সফলতার মুখ দেখেনি।  শিার্থীদের দাবী নতুন হল নির্মান করে আবাসিক সুবিধা প্রদানে উচ্চ শিার স্বার্থে সরকার নজরে দেবেন কি? সেই নেক নজরের প্রত্যাশায় আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত ২৪ হাজার শিার্থী।
ছাত্র-রাজনীতিঃ- সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন এখানে সক্রিয়। ছাত্রদল ছাত্র শিবিরকে কোন কার্যক্রম চালাতে দিচ্ছে না ছাত্রলীগ। কমিটি বিহীন ছাত্রলীগচরম অন্তকোন্দলে আছে। কমিটিহীন ছাত্রলীগ বিভিন্ন গ্র উপ গ্রপে বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খলআচরণে ভয়ে থাকে সাধারণ শিার্থীরা। সূত্র  জানায় কাম্পাসে মোবাইল ছিনতাই  ইভটিজিং সহ নানা ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা জড়িত। পুলিশ সাংবাদিকদের মারধরের সাথে ছাত্রলীগ জড়িত। ছাত্রলীগের সংঘর্ষে হামলায় বন্ধ হয়ে গেছে জবি একমাত্র ক্যান্টিন। সবার জিজ্ঞাসা বেপরোয়া ছাত্রলীগকেরুখবে কে?
সংস্কৃতি চর্চাঃ- সংস্কৃতি চর্চা এখানে নিয়মিত। নিমন্ত্রণ সাংস্কৃতিক সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জবি আবৃত্তি সংসদ, ডিবেিিটং সোসাইটি, উদীচী এখানে সক্রিয়। গান, আবৃত্তি, বিতর্ক, নাটক, নাচ প্রভৃতি সংস্কৃতির নানা ধরনের চর্চা দেখা যায়।
প্রত্যাশাঃআছে-নেই এর মাঝে অপার সম্ভাবনার তরী বেয়ে এগিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আলো ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। হলসহ যাবতীয়অপ্রাপ্তির আবসান আশু হতে যাচ্ছে। নিরন্তর নিবিড় প্রচেষ্টা আন্তরিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। আলো আসছে আলো আসবেই এই প্রত্যয়।
লেখকসাংবাদিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন