শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১১

জীবনের গল্প

কেমন আছে রণতরী
পাভেল সারওয়ার

দীর্ঘ বিরতির পর রণতরীকে নিয়ে লিখছি। শিাঙ্গনের যারা নিয়মিত পাঠক তাদের কাছে রণতরীকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন মনে করছিনা। তবে নতুন পাঠকদের বলছি, রণতরী - গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়য়া এক তরুণের নাম। হাসি- কান্না, মান-অভিমান, ভালবাসা-শ্রদ্ধাপ্রভৃতি হচ্ছে চরিত্রের মূল বৈশিষ্ঠ্য। 
রণতরী স্বাধীনচেতা তবে আত্মকেন্দ্রিক নয়। শিাঙ্গনের ৪র্থ বর্ষপূর্তি সংখ্যায় এসে রণতরীর বর্তমান হালচাল নিয়ে লিখছিকেমন আছে রণতরী
  রণতরী প্রচুর বৃষ্টি ভালবাসতো। বৃষ্টির দিনের বহু স্মৃতি জমে আছে তার মন মগজে।
সেবার আকাশে বৈশাখী মেঘ ছিল, তাই বৃষ্টির আনাগোনা ছিল থেমে থেমে। কোচিং শেষ করে কল্পনার রংতুলি দিয়ে কিছু একটা আঁকতে আঁকতে তার প্রিয়বন্ধুটিকে নিয়ে রাস্তার একপাশ ধরে হাঁটছিল রণতরী। যেই তারা এএম কলেজের সাইকেল স্ট্যান্ড পর্যন্ত আসল অমনি আকাশ ফেটে নেমে এল বৃষ্টি। দুজনেরইইচ্ছে ছিল বৃষ্টিতে ভিজবে না শুধু উপভোগ করবে বৃষ্টির সৌন্দর্য। কিন্তু প্রকৃতি তাদেরকে বৃষ্টির আবেগী ভালবাসায় সিক্ত করলো। দুজনের কাক ভেজাঅবস্থা।
এখন আর রণতরীর বৃষ্টির ভালবাসায় সিক্ত হতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টি এলে তার মনে অমাবশ্যার রাত নেমে আসে। বৃষ্টি এলে তার কানে বাজেবৃষ্টি ভেজামেঘলা আকাশ একলা হতে চায়/ স্বপ্ন নীলের মিছিলে খুঁজোনা আমায় কিন্তু রণতরী তার সে প্রিয় বন্ধুটিকে ফিরে পেতে চায়-যাকে সে পেয়েও হারিয়েছে।
আজ কাছের মানুষগুলি স্বার্থ-বাস্তবতার নৌকোয় চড়ে তাকে ফেলে চলে যাচ্ছে বলে রণতরী অন্ধকারকে আপন করে নিয়েছে। যে অন্ধকারকে কখনো সহ্যকরতে পারতো না সে। ঘরছাড়া দুরন্ত উচ্ছল সে রণতরীর এখন খোলা আকাশ থেকে বদ্ধ ঘরকে ভাল লাগে।
রণতরীর নতুন বন্ধু - দুধরাজ। নাম শুনে আশ্চর্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা কোন মানুষের নাম নয়। একটি কাঠের তৈরি খেলনা সাপের নাম। এক বড় ভাইথেকে উপহার পাওয়া। রণতরী তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো এখন এই দুধরাজের সাথে ভাগাভাগি করে। সে মনে করে সেও একা- সাপটিও একা। তবে দুয়েরমধ্যে অদ্ভুত মিল- দুজনই সব শুনতে পায় দেখতে পায় কিন্তু কিছু বলতে পারে না। রণতরী পারে না বাইরের জগতের মানুষগুলোর কাছে নিজের ভিতরেরমানুষটিকে প্রকাশ করতে।
তখন বর্ষাকাল ছিল। রণতরী গিয়েছিল পদ্মার পাড়ে। পদ্মার ছলাছলাঢেউ রণতরীর মনকে আলোড়িত করেছিল। সব বন্ধু  ঝাঁপিয়ে পড়ে পদ্মাকেবাহুবন্দি করেছিল। কিন্তু পদ্মার সেই ছলাছলাঢেউয়ের শব্দ এখন কেবলই সর্বগ্রাসী ভাঙনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
জোসনা বৃষ্টিতে ভেজা ছিল রণতরীর আরেকটি মজার ইচ্ছে। খোলা আকাশে পানির ট্যাংকের উপর বসে, রেললাইনের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে জোসনা কুড়িয়েকাটিয়েছিল কত্তো রাত! যাদের সঙ্গে নিয়ে সে জোসনায় স্নান করতো তারাও ইদানীং বদলে গেছে। সে বদলানোটা অনেকটা প্রথম আলোর বদলানোর মতোই।কিন্তু কিছু সম্পর্ক থাকে যা কখনোই বদলানো যায় না। বদলানো ঠিক না বিশ্বাস, আস্থা ভালবাসা। রণতরী ভালবেসেই পৃথিবীটাকে জয় করতে চেয়েছিল।এখনো চায় হয়তোবা! কিন্তু এখন জোসনা ছড়ানো চাঁদের দিকে তাকালে রণতরীর কেবলচাঁদের কলঙ্ক কথা মনে পড়ে।
রণতরীর অভিমানটা ইদানীং একটু বেড়েছে। অল্পতেই সে অভিমানী হয়ে যায় যে কারো প্রতি। কেউ তাকে বুঝতে চেষ্টা না করলে সে মনে করে তাকে অবহেলাকরছে যেটা তার অভিধানে অপমানের মতো।
রণতরীর নতুন জীবন শুরু হয় ২০০৭ সালের শেষ ভাগ থেকে। তখন থেকে সে পেয়েছে অনেক অভিভাবক-অনেক ভালবাসা। একটা সময় রণতরীর অনেকবন্ধু ছিল কিন্তু কোন ভাই ছিল না। নতুন জীবনে এসে সে অনেক ভাই পেয়েছে। এখন অভিভাবকদের প্রতি তার অভিমান-অভিযোগ খানিকটা বেশি। হয়তোভালবাসা বেশি বলে। রণতরী মনে করে ছোটরা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অভিভাবকরা যদি সে ভুলকে বড় করে দেখে তাকে দূরে ঠেলে দেয় তাহলেঅভিমানের সাথে রাগ যোগ হয়ে ঝড়ের সৃষ্টি হবেই।
মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কটা সাদা কাপড়ের মতো। খুব স্বচ্ছ এবং সুন্দর। ইচ্ছে করলে যে কেউ কেটে দুভাগ করতে পারে, জোড়াও দিতে পারে। কিন্তুসেলাইয়ের দাগ থেকে যায় আজীবনের জন্য। রণতরী তার ভাললাগার মানুষগুলোকে ভালবাসে দুধ পানির মতো। দুধ যখন পানির সাথে মিলে তখনদুজনে একাকার হয়ে যায়। কিন্তু আগুন দিয়ে তাপ দিলে পানি যখন বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে চায়; তখন দুধ ফুলে উঠে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আবারসেই দুধের উপর যখন পানির ছিটা দেয়া হয়; তখন দুধ পানিকে পেয়ে শান্ত হয়ে যায়। রণতরীও সকল মানুষকে ভালবেসে কাছে পেতে চায়। সে অনেকমানুষের মিছিলে একা থাকতে যায় না। সে কি পারবে ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন