মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১১

জুনোসিস মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিরাট ঝুঁকি -আবু সালেহ

আদিকাল থেকেই মানব জাতি নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আসছে। সাইকোন, হারিকেন থেকে শুরু করে আজকের দিনের রিটা ক্যাটরিনা, সুনামি, সিডর, নার্গিস কিংবা আইলা,কোনটিই বাদ যায়নি। এ ছাড়াও মাঝে মধ্যে নানা অজানা এবং মারাত্মক সব রোগ জীবানু মানব জাতিকে বিশেষ ভাবে ভাবিয়ে তোলে। বিশেষ করে এইডস, সার্স, বার্ড-ফু, সোয়াইন-ফু, নিপাই ভাইরাস তেমনি কিছু রোগ বালাই যা মানুষকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। জুনোসিস শব্দটি (তড়ড়+এৎববশ হড়ংড়ং  ফরংবধংব) গ্রীক ভাষা থেকে  এসেছে যার অর্থ প্রাণীর রোগ বালাই। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায, যে সব রোগ কোন মেরুদন্ডী প্রাণীদেহ থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয় তাকে জুনোটিক রোগ বলে। এবং এই প্রক্রিয়াটিকে বলে জুনোসিস। সম্প্রতি দেশে অ্যানথ্রাক্স ও নিপাই ভাইরাস ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যা মূলত: জুনোটিক রোগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এর পূর্বে সার্স, বার্ড-ফু, সোয়াইন-ফু, ইত্যাদি জুনোটিক রোগ পৃথিবী ব্যাপী মানুষকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তবে জুনোটিক রোগের জীবানু বেশীর ভাগই ভাইরাস জাতীয়। ফলে প্রত্যেকটি রোগের েেত্র ফলাফল অত্যন্ত প্রকট হয়ে থাকে। ভাইরাস সনাক্তকরণে জটিলতা এবং আক্রমণ কারী ভাইরাসের প্রতিষেধক  না থাকার কারণে  পশু-পাখি এবং মানুষের ভয়াবহ য়তির সম্ভাবনা তৈরী হয়। আরেকটি বিষয় হলো ভাইরাস পোষক দেহে অতি দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে  কিংবা দৈহিক সংস্পর্শে কাছাকাছি বা গাদাগাদি হয়ে বাস করা প্রাণীর মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক পত্রিকার পাতায় প্রায়ই খবর বের হচ্ছে অজ্ঞাত
রোগে একই পরিবারে পাঁচ জনের প্রাণহানি। এই অজ্ঞাত  রোগটি আমাদের দেশে প্রায়ই অজ্ঞাত থাকে। ধারণা করা হয়, বন্যপ্রাণীর কোন অজানা ভাইরাস কোন খাবারের মাধ্যমে হয়ত তারা গ্রহণ করেছেন। যেমন এটি হতে পারে গ্রামাঞ্চলে শীতের সকালে খেজুরের কাঁচা রস পান করার মাধ্যমে কিংবা বাঁদুড়  কর্তৃক আধা খাওয়া কোন পেয়ারা বা কলার   অবশিষ্টাংশ ভণের মাধ্যমে। শীতকালে আমাদের দেশে খেজুরের রস পানের বিশেষ প্রচলন আছে। মানুষের  পাশাপাশি বাঁদুড়ও রাতের বেলা গাছে ঝুলানো হাঁড়ির মধ্যে থেকে রস খেয়ে থাকে। কখন বা বাদুর কচি ডাব ছিদ্র করে তার পানি  পান করে। এ সময় অন্য  ডাবের গায়েও এই পানি লেগে যায়। অন্যদিকে এই বাঁদুড় প্রজাতিরা নিপাই ভাইরাস বহন করে। ফলে এরা রস পানের সময় নিপাই ভাইরাসটিও হাঁড়ির রসের সাথে মিশে যায়, সকালে যখন বাড়ির সবাই মহা ধুমধামে ঠান্ডা কাঁচা রস পান করে কিংবা ভতি ডাবের বা অন্য কোন ফলের সাথে ভাল ফল লেগে থাকলে  সেই ফল ভালভাবে না ধুয়ে খেলে তখনই দেহে প্রবেশ করে নিরব ঘাতক নিপাই ভাইরাস। সাম্প্রতিক কালে জুনোটিক রোগ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণার আগ্রহ বেশ বেড়েছে। তার অন্যতম কারণ হলো এসব রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া। ১৯৯৯ সালে নীল ভাইরাস নিউইয়ার্ক সিটিতে ছড়িয়ে পড়ে যেটি ২০০২ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেখা গেছে। অন্যদিকে বিশ্বের  সবচেয়ে ভয়ংকর  মরণ ঘাতক ব্যাধি এইডস্  ও এক প্রকার জুনোটিক রোগ বলে বিজ্ঞানীগণ অভিমত দিয়েছেন। তাদের মতে এক ধরণের লেজ বিহীন বন্য বানরের সাথে কিছু চরিত্রহীন মানুষ তাদের জৈবিক চাহিদা  চরিতার্থ করে। পরে ঐ সব মানুষ আবার সভ্য মানুষের সাথে কিংবা পতিতালয়ে গমনাগমনের মাধ্যমে এইচ.আই.ভি. ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করে।
বিজ্ঞানী উধংুধশ বঃ ধষ(২০০১) বলেন, নতুন নতুন জুনোটিক রোগের আবির্ভাবের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে পরস্পরের কাছাকাছি আসার প্রবণতা সাম্প্রতিক কালে ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশের ব্যাপক  পরিবর্তনের জন্য মানুষ বন্য প্রানীর আবাস স্থলে যাতায়াত অথবা  মানুষের আবাস স্থলে বন্যপ্রানীর গমনাগমনের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরো গাঢ়  হয়েছে। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় নিপাই ভাইরাস (ঘরঢ়ধয ারৎধং) এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এটি ঘটে যখন শুকরের ব্যাপক ফার্মিং এর কারণে শুকররা নিপাই ভাইরাস বহনকারী ফলভোগী বাঁদুর প্রজাপতির প্রাকৃতিক আবাস স্থলে ঢুকে পড়ে। এবং পরবর্তীতে বাদুড়ের দেহ থেকে শুকর এবং শুকরের দেহ থেকে মানুষে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি । সে সময় ১০৫ জন কৃষক নিপাই ভাইরাসের আক্রমণে মারা যায়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে  নিপাই ভাইরাসের উৎপাত  ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত (১৮-০২-২০১১) ২৫ জন লোক মারা গেছে নিপাই ভাইরাসের আক্রমণে। তাই সময় এসেছে  এসব রোগের সংক্রামণ থেকে সকল মানুষের মধ্যে  গণ-সচেতনতা তৈরী করার। এ ব্যাপারে দেশের গণ মাধ্যম তথা রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, পোস্টারিং ও লিফলেট  বিতরণের মাধ্যমে  পৃথিবীবাসীকে সচেতন করে তোলাই সূধীজনের তথা সুশীল সমাজের কিংবা প্রত্যেকটি মানুষের কাজ।
ঠেকাই জুনোসিস, বাঁচাই দেশ;
আসতে পারে শান্তির আবেশ।
এম. এসসি. (ফিশারিজ) প্রথম শ্রেণী,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন