মধ্যপ্রাচ্যের এখনই সর্তক না হলে অশনি সংকেত দেখা দেবে গোটা মুসলিম দেশগুলোতে। এমনই মন্তব্য করেছেন বিষেশজ্ঞরা। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন দিন দিন প্রবল আকার ধারণ করছে। তিউনিসিয়া ও মিশরের পর এবার বাহরাইন, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের বিােভকারীরা মতাসীনদের বিরুদ্ধে রাজপথে বিােভ অব্যাহত রেখেছে। সরকার বিরোধীদের বিােভে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বাহরাইনে বিােভকারীরা সরকার পতনের ডাক দিয়েছে। তারা বলেছে সরকার গদি না ছাড়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না। অপরদিকে, লিবিয়াতে বিােভ সহিংসতায় কয়েকশ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানা গেছে। লিবিয়ায় সেনাবাহিনী বিােভকারীদের ওপর ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। বাহরাইনে সরকার আলোচনার উদ্যোগ নিলেও দাবি না মানলে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। মরক্কোর রাজধানীতেও বিােভ হচ্ছে। মিসরের সেই তাহরির স্কয়ারে আবার জমায়েত হচ্ছে বিােভকারীরা। তিউনিসিয়ায়ও বিােভ থামেনি। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের বিপ্লবে
উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার চীনেও আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। তিউনিসিয়া ও মিসরে সফল গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বিরাট অংশে লেগেছে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ। লিবিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেন বিােভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। অপরদিকে, মিসরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোকবারকের পতনে বিজয় উল্লাসে মেতেছে জনতা। অন্যদিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিউনিসিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্ট বেন আলী কোমায় চলে গেছেন। সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। এদিকে লিবিয়া সরকার বিােভে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা বন্ধ না করলে তাদেরকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। লিবিয়া অশান্ত হবার কারণে তেলের দামও বেড়ে গেছে।
দেশে দেশে বিাোভ-সমাবেশ
লিবিয়ায় আন্দোলন : লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি পদত্যাগ না করে প্রয়োজনে শহীদ হবেন বলে ঘোষণা দেয়ার পর দেশটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গাদ্দাফির এক সাক্ষাতে টিভি ভাষণে তার বাহিনীকে বিােভকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর বিােভকারীদের সাথে সরকারের অনুগত বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। একে গৃহযুদ্ধের আলামত হিসেবে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসংঘ। তবে গাদ্দাফি মতা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিলেও তার পৃথিবী ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিােভকারীদের দখলে। বিশ্বের বহু দেশ এবং জাতিসংঘ সেখানকার হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে। এতে আরো কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি।
বিােভ দমনে গাদ্দাফি চরমপন্থা অবলম্বনের পরেও রাজধানী ত্রিপোলির দখল নেয়ার জন্য বিােভকারীরা জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, গাদ্দাফির নড়াচড়া এখন কার্যত রাজধানী ত্রিপোলিকেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। বিােভকারীরা দাবি করে, গাদ্দাফিকে পদত্যাগ করতেই হবে। তবে বিােভকারীদের উপর নিজ সমর্থকদের হামলা চালানোর আদেশ দিয়ে পালানোর পথ তিনি নিজেই বন্ধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে প্রয়োজনে শহীদের মৃত্যু বরণ করবেন। নিজ সমর্থকদের ঘর থেকে বের হয়ে বিােভকারীদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন গাদ্দাফি। তার দমনাভিযানের হুমকি উপো করে হাজারে হাজারে রাজপথে নামছে আন্দোলকারীরা। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। গাদ্দাফি মতা থেকে সরে না দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে বিােভ দমনের হুমকি দেওয়ার পর আন্দোলন গতি পেয়েছে। একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তা গাদ্দাফির প ত্যাগ করছেন। আন্তর্জাতিক চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন গাদ্দাফি। বেনগাজিতে উৎসব শুরু করেছে বিােভকারীরা। একদিকে বিােভের জোয়ার আর অন্যদিকে গাদ্দাফির দমনাভিযানের হুমকিতে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কায় লিবিয়ায় নিজ নিজ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
পদত্যাগ করবেন না ঃ এক টেলিভিশন ভাষণে গাদ্দাফি বলেন, শহীদ হব, তবু পদত্যাগ করবো না। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু তেল কোম্পানির ষড়যন্ত্রের কারণে তার বিরুদ্ধে বিােভ হচ্ছে। ভাষণের সময় গাদ্দাফি ােভে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বার বার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে টেবিলে আঘাত করতে থাকেন। লিবীয় নেতা বলেন, আমি একজন যোদ্ধা। তৃণমূল থেকে আমি বিদ্রোহী গাদ্দাফি হয়েছি। বিােভকারীদের হুশিয়ার করে তিনি বলেন, আমি এখনো আমার সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করার আদেশ দেইনি। এখনো গুলি চালানোর নির্দেশ দেইনি। যখন সেই আদেশ দিব, তখন কিন্তু সব জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওহে নারী-পুরুষ তোমরা যারা গাদ্দাফিকে ভালোবাস, সবাই ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথ দখলে নাও। ঘর ছেড়ে তাদের আক্রমণ কর। তোমরা বের হয়ে তাদের উপর হামলা চালাও। গাদ্দাফি তরুণদের নিজ নিজ এলাকায় কমিটি গঠন করতে আহ্বান জানান। তার সমর্থকরা যাতে একে অন্যকে চিনতে পারে সেজন্য তিনি হাতে সবুজ ব্যান্ড পরতে বলেন। তিনি নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, লিবিয়া গৌরব চায়, লিবিয়া গোটা বিশ্বের শীর্ষে উঠতে চায়। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ুন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই ভাষণের মাধ্যমে গাদ্দাফি গৃহযুদ্ধকে উসকে দিলেন।
প্রত্যদর্শীদের বিবরণ ঃ ত্রিপোলির বাসিন্দারা জানান, গাদ্দাফির বাহিনী গণহত্যা শুরু করেছে এবং বন্দুকধারীরা নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করছে। তারা জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকার সশস্ত্র আফ্রিকান ভাড়াটে সৈন্য ভর্তি একটি বিমান অবতরণ করেছে। ভাড়াটে সৈন্যরা রাস্তায় যাকে দেখছে তার ওপর গুলি চালাচ্ছে। এতে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।
প ছাড়ছেন কূটনীতিকরা ঃ বিােভকারীদের ওপর সহিংস দমনাভিযানের প্রতিবাদে গাদ্দাফির সরকারের প ত্যাগ করছেন জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত লিবিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, আরব লীগ, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশের দূতবাসের লিবীয় কূটনীতিকরা হয় পদত্যাগ করেছেন নয়তো গাদ্দাফি সরকারের প ত্যাগ করেছেন। এদিকে তুমুল গণবিােভে লিবীয় নেতা গাদ্দাফির গদির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। বিােভকারীরা দেশের অন্যতম প্রধান শহর বেনগাজি দখল করার পর রাজধানী ত্রিপোলিতে ব্যাপক বিােভ শুরু করেছে। ুব্ধ আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্টের একটি ভবন, একাধিক মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রীয় টিভি ভবনে আগুণ ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয় রাজপথের বহু সংখ্যক গাড়ি। বিােভকারীরা ব্যাংক এবং সরকারি ভবনের বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুট করেছে। রাজধানীসহ একাধিক শহরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। লিবিয়ায় চলমান বিােভ-সহিংসতার মধ্যে মতা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন গাদ্দাফি ও তার পরিবার। গাদ্দাফি পুত্র ইতিমধ্যে দেশের গৃহযুদ্ধ হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বিােভকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে বিােভকারীরা তাদের প্রস্তাবে কর্ণপাত করছে না। তাদের একমাত্র দাবি এখন গাদ্দাফির পদত্যাগ। লিবিয়া সরকারের বিােভ দমনাভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। এর বিরুদ্ধে সমুচিত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তারা। ফলে বাড়তি চাপের মুখে পড়েছে গাদ্দাফি প্রশাসন। ব্যাপক হতাহতের পর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী ছাড়তে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ডাক্তাররা দেশের এ ঘটনাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। তারা জানান, হাসপাতালে শুধু আহত রোগী আর রোগী। আহতদের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ডাক্তাররা চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, লিবিয়ার ৪২ বছরের শাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগ ও দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে বিােভ করছে জনতা। ১৯৬৯ সালে তরুণ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার রাষ্ট্রমতা দখল করেন গাদ্দাফি। তখন থেকে দেশটি শাসন করে আসছেন তিনি। গাদ্দাফি হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের কোনো দেশের শাসকদের অন্যতম এবং লিবিয়ার সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক। বিােভ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশটিতে ইতিমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও আল-জাজিরা ওয়েবসাইট।
রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ ঃ এদিকে, বিােভকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে ভারতে নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আলি আল-এসাবি পদত্যাগ করেছেন।
ইয়েমেন গণ আন্দোলন ঃ মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনের ঢেউয়ের আঘাত চলছে ইয়েমেনেও। ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল সালেহর পদত্যাগের দাবিতে বিােভ শুরু হয়েছ। দেশটিতে সরকারবিরোধী বিােভ-সহিংসতায় নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। তাইজে শহরের হুরিয়া (স্বাধীনতা) স্কয়ারে সমবেত বিােভকারীদের উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন বিােভকারী আহত হয়েছে। শহরে শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিােভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণর চেষ্টা করছে।
মিশরে বিজয় মিছিল ঃ মিসরের সফল গণ অভ্যুত্থান উদযাপন করতে বিজয় মিছিলের আয়োজন করে জনগণ। হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের শাসনাবসান উপলে এ মিছিলে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনের ১৮ দিনের নিহত শতাধিক মানুষকে তারা স্মরণ করে এ বিজয় যাত্রার মধ্য দিয়ে। এ বিজয়কে ব্যর্থ হতে দেয়া হবে না। বিােভকারীদের প্রতি কঠোর হবে মিসরীয় সেনাবাহিনী মিসরে গণআন্দোলনের পর প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতন হবার পর এখনও একটি অংশ বিােভ বন্ধ না করায় কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সেনাবাহিনী। বিােভকারীদের প্রতি সেনাবাহিনী ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মিলিটারি কাউন্সিলের প থেকে বলা হয়েছে আর কোনো ধরনের বিােভ কিংবা ধর্মঘট সহ্য করা হবে না। কঠোর হস্তে এসব দমন করা হবে।
তিউনিসিয়া মতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মৃত্যুর মুখে : এদিকে, তিউনিশিয়ার মতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জাইন আল আবিদিন বেন আলী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবের এক হাসপাতালে কোমায় রয়েছেন। তার পারিবারিক এক বন্ধু এ কথা জানান। সূত্র মতে, স্ট্রোক করার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি কোমায় চলে যান। তার অবস্থা আশংকাজনক।
চীনেও আন্দোলনের ডাক : আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে চীনেও আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে গণজমায়েতের ডাক দেয়া হয়। সাংহাই, বেইজিংসহ বড় বড় শহরে এই জমায়েতের আয়োজন করা হয়। তবে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করে।
বাহরাইনে বিােভ : বাহরাইনে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। রাজধানী মানামার নিয়ন্ত্রণ এখন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সরকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও হাজার হাজার বিােভকারী মানুষের ঢল নামে। হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয় রাজধানীতে। তারা সরকারবিরোধী ব্যানার নিয়ে রাস্তায় শ্লোগান দেয়।
ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে কয়েকদিন যাবৎ বাহরাইনে বিােভ চলছে।
কয়েকদিনের বিােভের পর সম্প্রতি বাহরাইন সরকার দেশটিতে বিােভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনী রাজধানী মানামার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং রাজধানীতে প্রবেশের পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক নিয়ে টহল দেয়া শুরু করে। আকাশে হেলিকপ্টার দেখা যায়। কোথাও কোথাও দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিােভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হতে দেখা যায়। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এপি, এএফপি, সিএনএন।
বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ ও বিােভকারীরা এই দমন-পীড়নকে নিষ্ঠুর কাজ বলে অভিহিত করেছেন। সংখ্যালঘু শিয়াদের প্রধান দলের এক নেতা বলেছেন, সরকারের কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ১৮ জন এমপি পদত্যাগ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছুই আমরা করব, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দিব। আমরা কার্যকর ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র চাই।
নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা ঃ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ লিবিয়ায় সরকার বিরোধী বিােভকারীদের ওপর প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর ভয়াবহ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা লিবিয়ায় দ্রুত সহিংসতা বন্ধেরও দাবি করেছে। পনের সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবানও জানিয়েছে। পরিষদ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শক্তি প্রয়োগ এবং শান্তিপূর্ণ বিােভকারীদের ওপর দমন পীড়ন বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ঃ এদিকে লিবিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে পেরু। লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে মতাচ্যুত করতে স্বতস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রক্তয়ী অভিযানের প্রোপটে পেরুই প্রথম দেশ হিসেবে এ ধরনের পদপে নিল। পেরুর প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্সিয়া বলেছেন, জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লিবিয়ার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে পেরু।
বারাক ওবামার নিন্দা ঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিােভকারীদের প্রতি সংযত আচরণ করার জন্য সব দেশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিশেষ করে বাহরাইনের বাদশাহকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে জোরালো সহযোগিতার প্রস্তাব করা ইয়েমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের শত্রুভাবাপন্ন দেশ লিবিয়ায় সরকার বিরোধী বিােভকারীদের ওপর দমনপীড়নেরও নিন্দা জানান। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা সমর্থক এ দেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। তিনি তিউনিসিয়া, মিশর, বাহরাইন, লিবিয়া ও ইয়েমেনসহ যে সব দেশে গণ আন্দোলন শুরু হয়েছে এতে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন।
মরক্কোর রাজধানী রাবাতেও হাজার হাজার লোক বিােভ করে। বাদশার কিছু মতা হ্রাসের দাবিতে তারা বিােভ করছে। এদিকে তিউনিসিয়ার রাজধানীতে বিােভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি করে নিরাপত্তা বাহিনী। তারা অন্তর্বতী সরকারের পরিবর্তন চায়। ব্যাপক বিােভের মুখে তিউনিসিয়ায়ই প্রথম সরকার পতন হয়। তবে বাহরাইন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংগঠন গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল সংগঠিত এ সমস্যা সমাধানে বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেছেন।
- সাংবাদিক
উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার চীনেও আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। তিউনিসিয়া ও মিসরে সফল গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতন হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বিরাট অংশে লেগেছে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ। লিবিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেন বিােভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। অপরদিকে, মিসরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোকবারকের পতনে বিজয় উল্লাসে মেতেছে জনতা। অন্যদিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিউনিসিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্ট বেন আলী কোমায় চলে গেছেন। সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। এদিকে লিবিয়া সরকার বিােভে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা বন্ধ না করলে তাদেরকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। লিবিয়া অশান্ত হবার কারণে তেলের দামও বেড়ে গেছে।
দেশে দেশে বিাোভ-সমাবেশ
লিবিয়ায় আন্দোলন : লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি পদত্যাগ না করে প্রয়োজনে শহীদ হবেন বলে ঘোষণা দেয়ার পর দেশটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গাদ্দাফির এক সাক্ষাতে টিভি ভাষণে তার বাহিনীকে বিােভকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর বিােভকারীদের সাথে সরকারের অনুগত বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। একে গৃহযুদ্ধের আলামত হিসেবে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসংঘ। তবে গাদ্দাফি মতা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিলেও তার পৃথিবী ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিােভকারীদের দখলে। বিশ্বের বহু দেশ এবং জাতিসংঘ সেখানকার হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে। এতে আরো কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি।
বিােভ দমনে গাদ্দাফি চরমপন্থা অবলম্বনের পরেও রাজধানী ত্রিপোলির দখল নেয়ার জন্য বিােভকারীরা জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, গাদ্দাফির নড়াচড়া এখন কার্যত রাজধানী ত্রিপোলিকেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। বিােভকারীরা দাবি করে, গাদ্দাফিকে পদত্যাগ করতেই হবে। তবে বিােভকারীদের উপর নিজ সমর্থকদের হামলা চালানোর আদেশ দিয়ে পালানোর পথ তিনি নিজেই বন্ধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে প্রয়োজনে শহীদের মৃত্যু বরণ করবেন। নিজ সমর্থকদের ঘর থেকে বের হয়ে বিােভকারীদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন গাদ্দাফি। তার দমনাভিযানের হুমকি উপো করে হাজারে হাজারে রাজপথে নামছে আন্দোলকারীরা। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। গাদ্দাফি মতা থেকে সরে না দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে বিােভ দমনের হুমকি দেওয়ার পর আন্দোলন গতি পেয়েছে। একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তা গাদ্দাফির প ত্যাগ করছেন। আন্তর্জাতিক চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন গাদ্দাফি। বেনগাজিতে উৎসব শুরু করেছে বিােভকারীরা। একদিকে বিােভের জোয়ার আর অন্যদিকে গাদ্দাফির দমনাভিযানের হুমকিতে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কায় লিবিয়ায় নিজ নিজ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
পদত্যাগ করবেন না ঃ এক টেলিভিশন ভাষণে গাদ্দাফি বলেন, শহীদ হব, তবু পদত্যাগ করবো না। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু তেল কোম্পানির ষড়যন্ত্রের কারণে তার বিরুদ্ধে বিােভ হচ্ছে। ভাষণের সময় গাদ্দাফি ােভে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বার বার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে টেবিলে আঘাত করতে থাকেন। লিবীয় নেতা বলেন, আমি একজন যোদ্ধা। তৃণমূল থেকে আমি বিদ্রোহী গাদ্দাফি হয়েছি। বিােভকারীদের হুশিয়ার করে তিনি বলেন, আমি এখনো আমার সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করার আদেশ দেইনি। এখনো গুলি চালানোর নির্দেশ দেইনি। যখন সেই আদেশ দিব, তখন কিন্তু সব জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওহে নারী-পুরুষ তোমরা যারা গাদ্দাফিকে ভালোবাস, সবাই ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথ দখলে নাও। ঘর ছেড়ে তাদের আক্রমণ কর। তোমরা বের হয়ে তাদের উপর হামলা চালাও। গাদ্দাফি তরুণদের নিজ নিজ এলাকায় কমিটি গঠন করতে আহ্বান জানান। তার সমর্থকরা যাতে একে অন্যকে চিনতে পারে সেজন্য তিনি হাতে সবুজ ব্যান্ড পরতে বলেন। তিনি নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, লিবিয়া গৌরব চায়, লিবিয়া গোটা বিশ্বের শীর্ষে উঠতে চায়। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ুন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই ভাষণের মাধ্যমে গাদ্দাফি গৃহযুদ্ধকে উসকে দিলেন।
প্রত্যদর্শীদের বিবরণ ঃ ত্রিপোলির বাসিন্দারা জানান, গাদ্দাফির বাহিনী গণহত্যা শুরু করেছে এবং বন্দুকধারীরা নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করছে। তারা জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকার সশস্ত্র আফ্রিকান ভাড়াটে সৈন্য ভর্তি একটি বিমান অবতরণ করেছে। ভাড়াটে সৈন্যরা রাস্তায় যাকে দেখছে তার ওপর গুলি চালাচ্ছে। এতে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।
প ছাড়ছেন কূটনীতিকরা ঃ বিােভকারীদের ওপর সহিংস দমনাভিযানের প্রতিবাদে গাদ্দাফির সরকারের প ত্যাগ করছেন জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত লিবিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, আরব লীগ, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশের দূতবাসের লিবীয় কূটনীতিকরা হয় পদত্যাগ করেছেন নয়তো গাদ্দাফি সরকারের প ত্যাগ করেছেন। এদিকে তুমুল গণবিােভে লিবীয় নেতা গাদ্দাফির গদির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। বিােভকারীরা দেশের অন্যতম প্রধান শহর বেনগাজি দখল করার পর রাজধানী ত্রিপোলিতে ব্যাপক বিােভ শুরু করেছে। ুব্ধ আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্টের একটি ভবন, একাধিক মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রীয় টিভি ভবনে আগুণ ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয় রাজপথের বহু সংখ্যক গাড়ি। বিােভকারীরা ব্যাংক এবং সরকারি ভবনের বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুট করেছে। রাজধানীসহ একাধিক শহরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। লিবিয়ায় চলমান বিােভ-সহিংসতার মধ্যে মতা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন গাদ্দাফি ও তার পরিবার। গাদ্দাফি পুত্র ইতিমধ্যে দেশের গৃহযুদ্ধ হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বিােভকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে বিােভকারীরা তাদের প্রস্তাবে কর্ণপাত করছে না। তাদের একমাত্র দাবি এখন গাদ্দাফির পদত্যাগ। লিবিয়া সরকারের বিােভ দমনাভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। এর বিরুদ্ধে সমুচিত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তারা। ফলে বাড়তি চাপের মুখে পড়েছে গাদ্দাফি প্রশাসন। ব্যাপক হতাহতের পর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী ছাড়তে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ডাক্তাররা দেশের এ ঘটনাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। তারা জানান, হাসপাতালে শুধু আহত রোগী আর রোগী। আহতদের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ডাক্তাররা চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, লিবিয়ার ৪২ বছরের শাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগ ও দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে বিােভ করছে জনতা। ১৯৬৯ সালে তরুণ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার রাষ্ট্রমতা দখল করেন গাদ্দাফি। তখন থেকে দেশটি শাসন করে আসছেন তিনি। গাদ্দাফি হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের কোনো দেশের শাসকদের অন্যতম এবং লিবিয়ার সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক। বিােভ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশটিতে ইতিমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও আল-জাজিরা ওয়েবসাইট।
রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ ঃ এদিকে, বিােভকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে ভারতে নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আলি আল-এসাবি পদত্যাগ করেছেন।
ইয়েমেন গণ আন্দোলন ঃ মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনের ঢেউয়ের আঘাত চলছে ইয়েমেনেও। ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল সালেহর পদত্যাগের দাবিতে বিােভ শুরু হয়েছ। দেশটিতে সরকারবিরোধী বিােভ-সহিংসতায় নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। তাইজে শহরের হুরিয়া (স্বাধীনতা) স্কয়ারে সমবেত বিােভকারীদের উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন বিােভকারী আহত হয়েছে। শহরে শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিােভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণর চেষ্টা করছে।
মিশরে বিজয় মিছিল ঃ মিসরের সফল গণ অভ্যুত্থান উদযাপন করতে বিজয় মিছিলের আয়োজন করে জনগণ। হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের শাসনাবসান উপলে এ মিছিলে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনের ১৮ দিনের নিহত শতাধিক মানুষকে তারা স্মরণ করে এ বিজয় যাত্রার মধ্য দিয়ে। এ বিজয়কে ব্যর্থ হতে দেয়া হবে না। বিােভকারীদের প্রতি কঠোর হবে মিসরীয় সেনাবাহিনী মিসরে গণআন্দোলনের পর প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতন হবার পর এখনও একটি অংশ বিােভ বন্ধ না করায় কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সেনাবাহিনী। বিােভকারীদের প্রতি সেনাবাহিনী ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মিলিটারি কাউন্সিলের প থেকে বলা হয়েছে আর কোনো ধরনের বিােভ কিংবা ধর্মঘট সহ্য করা হবে না। কঠোর হস্তে এসব দমন করা হবে।
তিউনিসিয়া মতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মৃত্যুর মুখে : এদিকে, তিউনিশিয়ার মতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জাইন আল আবিদিন বেন আলী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবের এক হাসপাতালে কোমায় রয়েছেন। তার পারিবারিক এক বন্ধু এ কথা জানান। সূত্র মতে, স্ট্রোক করার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি কোমায় চলে যান। তার অবস্থা আশংকাজনক।
চীনেও আন্দোলনের ডাক : আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে চীনেও আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে গণজমায়েতের ডাক দেয়া হয়। সাংহাই, বেইজিংসহ বড় বড় শহরে এই জমায়েতের আয়োজন করা হয়। তবে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করে।
বাহরাইনে বিােভ : বাহরাইনে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। রাজধানী মানামার নিয়ন্ত্রণ এখন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সরকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও হাজার হাজার বিােভকারী মানুষের ঢল নামে। হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয় রাজধানীতে। তারা সরকারবিরোধী ব্যানার নিয়ে রাস্তায় শ্লোগান দেয়।
ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে কয়েকদিন যাবৎ বাহরাইনে বিােভ চলছে।
কয়েকদিনের বিােভের পর সম্প্রতি বাহরাইন সরকার দেশটিতে বিােভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনী রাজধানী মানামার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং রাজধানীতে প্রবেশের পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক নিয়ে টহল দেয়া শুরু করে। আকাশে হেলিকপ্টার দেখা যায়। কোথাও কোথাও দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিােভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হতে দেখা যায়। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এপি, এএফপি, সিএনএন।
বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ ও বিােভকারীরা এই দমন-পীড়নকে নিষ্ঠুর কাজ বলে অভিহিত করেছেন। সংখ্যালঘু শিয়াদের প্রধান দলের এক নেতা বলেছেন, সরকারের কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ১৮ জন এমপি পদত্যাগ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছুই আমরা করব, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দিব। আমরা কার্যকর ও সাংবিধানিক গণতন্ত্র চাই।
নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা ঃ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ লিবিয়ায় সরকার বিরোধী বিােভকারীদের ওপর প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর ভয়াবহ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা লিবিয়ায় দ্রুত সহিংসতা বন্ধেরও দাবি করেছে। পনের সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবানও জানিয়েছে। পরিষদ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শক্তি প্রয়োগ এবং শান্তিপূর্ণ বিােভকারীদের ওপর দমন পীড়ন বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ঃ এদিকে লিবিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে পেরু। লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে মতাচ্যুত করতে স্বতস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রক্তয়ী অভিযানের প্রোপটে পেরুই প্রথম দেশ হিসেবে এ ধরনের পদপে নিল। পেরুর প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্সিয়া বলেছেন, জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লিবিয়ার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে পেরু।
বারাক ওবামার নিন্দা ঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিােভকারীদের প্রতি সংযত আচরণ করার জন্য সব দেশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিশেষ করে বাহরাইনের বাদশাহকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে জোরালো সহযোগিতার প্রস্তাব করা ইয়েমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের শত্রুভাবাপন্ন দেশ লিবিয়ায় সরকার বিরোধী বিােভকারীদের ওপর দমনপীড়নেরও নিন্দা জানান। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা সমর্থক এ দেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। তিনি তিউনিসিয়া, মিশর, বাহরাইন, লিবিয়া ও ইয়েমেনসহ যে সব দেশে গণ আন্দোলন শুরু হয়েছে এতে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন।
মরক্কোর রাজধানী রাবাতেও হাজার হাজার লোক বিােভ করে। বাদশার কিছু মতা হ্রাসের দাবিতে তারা বিােভ করছে। এদিকে তিউনিসিয়ার রাজধানীতে বিােভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি করে নিরাপত্তা বাহিনী। তারা অন্তর্বতী সরকারের পরিবর্তন চায়। ব্যাপক বিােভের মুখে তিউনিসিয়ায়ই প্রথম সরকার পতন হয়। তবে বাহরাইন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংগঠন গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল সংগঠিত এ সমস্যা সমাধানে বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেছেন।
- সাংবাদিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন