মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১১

ভোক্তাদের অধিকার রায় আইনের যথার্থ প্রয়োগ চাই মো: আশরাফ আলী



বর্তমানে আমাদের দেশে দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দড়িয়েছে। দ্রব্য মুল্যবৃদ্ধিও নামে চলছে এক ধরনের প্রতারনার খেলা, কোন ধরনের নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে যে,যার মত মূল্য আদায় করে নিচ্ছে ভোক্তাদের কাছ থেকে। এর ফলে তিগ্রস্থ হচ্ছে সর্বস্থরের মানুষ,তবে তুলুনামুলক বেশি র্দুভোগের শিকার হচ্ছে দিনমুজুর,কৃষক ও নিম্নবৃত্ত সীমিত আয়ের মানুষ। এেেত্র কৃষকরা তিগ্রস্থ হচ্ছে উভয় দিক থেকে, কারন তাদের কোন উৎপাদিত পন্য বিক্রি করার সময় কমদামে বিক্রি করতে হয় এবং ওজনেও তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৪২ কেজিতে মণ হিসাবে। আবার তারা যখন কিনতে যায় তখন তাদের পর্ন কিনতে হয় চড়া দামে। এই প্রতারিত বা তিগ্রস্ত ভোক্তদের সার্থ রার ল্েয চার দলিয় জোট সরকার আমলে আইন করার উদ্যোগ নেয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আইনটির কাজ এগিয়ে নিলেও বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের সর্বচ্চো ফোরামে ৬-ই এপ্রিল ২০০৯ ইং তারিখে আইনটি পাস হয়। যার নাম দেয়া হয় ভোক্তা অধিকার সংরন আইন-২০০৯। কিন্তু আইনটি পাস হওয়ার পর যথার্থ প্রয়োগ না হওয়ায় ভোক্তারা এখনও এর সুফল পায়নি। 
আইনটিতে ভোক্তাদের অধিকার বিরোধী কার্যহিসাবে যে সব দিক চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলোর কয়েকটি নিম্নে দেয়া হলোঃ
এই আইনের ২০(ক) কোন আইন বা বিধির অধীন নিধারিত মুল্য অপো অধিক মুল্যে কোন পন্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় করা বা প্রস্তাব করা;
   (খ) অজ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পন্য বা ঔষুধ বিক্রয় বা করিতে  প্রস্তাব করা;
  (গ) মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ভাবে তিকারক কোন দ্রব্য, কোন খাদ্যপন্যের সহিত যা মিশ্রন কোন আইন বা বিধির  অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে উক্ত রূপ দ্রব্যমিশ্রিত  কোন পন্য বিক্রায় বা  করিতে  প্রস্তাব করা;
ঘ) কোন পন্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন  দ্বারা ক্রেতা সাধারনকে প্রভাবিত করা;
(চ) কোন পন্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের  সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপো কম ওজনে বিক্রয় বা সর্বরাহ করা;  ও
(ছ) কোন পন্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কাজে ব্যবহত  বাটখারা বা ওজন পরিমাপের যন্ত্র প্রকৃত ওজন অপো অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শন কারী হওয়া  ইত্যাদি।
এই আইনের  ৮ ধারায় বলা আছে যে, ভোক্তা অধিকার সংরন পরিষদ এর কার্য হবে এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় বিধান মালা প্রনয়ন ; ভোক্তা অধিকার সর্ম্পকে জনসাধারনকে সচেতন করার ল্েয প্রয়োজনীয় শিা ও প্রচারনা মূলক কার্যক্রম গ্রহন করা ইত্যাদি।  কিন্তু এর কোন বাস্তব প্রতিফলন না থাকায় এধরনের যে একটি আইন আছে তা এখনও অনেকই জানে না। ভোক্তা অধিকার সংরন  আইনে অভিযুক্ত কয়েকটি অপরাধের শাস্তির বিধান নিম্নে দেয়া হলোঃ 
এই আইনের ৪০ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপো অধিক মূল্যে কোন পন্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় করলে বা করার প্রস্তাব তিনি অনুর্ধ্ব এক বৎসর কারাদ›ন্ড,বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
এই আইনের ৪১ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পন্য বা ঔষধ বিক্রয় করলে বা করার প্রস্তাব তিনি অনুর্দ্ধ তিন বৎসর কারাদ›ন্ড, বা অনধিক দুই ল টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
এই আইনের ৪৭ ধারা মোতাবেক কোন পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কোন  ব্যক্তি দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কাজে ব্যবহত বাটখারা বা ওজন পরিমাপ যন্ত্র  প্রকৃত অপো অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হলে তিনি অনুর্ধ্ব এক বৎসর কারাদ›ন্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার অর্থদন্ড,বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
আইনে শাস্তির এত কঠোর বিধান থাকা সত্ত্বেও দুর্বল প্রয়োগের কারনে  দ্রব্যমুল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর অন্যতম কারন এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠী। যার ফলে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে সকল  চেষ্টা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের একটা কালচারে পরিনত হয়েছে, কোন পণ্যের দাম বাড়লে সেটা বর্হিবিশ্বে কমলেও আমাদের দেশে আর কমে না। প্রতি বৎসর বাজেট পাশের সাথে সাথে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটা হিড়িক পড়ে যায়। এতে দেখা যায় বাজেটে যে পণ্যটির দাম বাড়েনি সেটিও বেশি দামে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের এই ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন ও দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ। এেেত্র কিছু ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠীর কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা কমলেও দেশের বৃহৎ জনসাধারন এতে উপকৃত হবে এবং সরকারের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধিপাবে। কারন দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে না পারলে দেশকে দুঃর্নীতি মুক্ত করার প্রতিশ্র“তির ব্যর্থয় ঘটবে। তাই দেশের বৃহৎ জনসাধানের স্বার্থে এই আইনটির যথাযর্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করা  সময়ের দাবী। 
লেখক : আইন বিভাগ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন