রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আকাশ-সংস্কৃতির প্রভাব -সালেহ উদ্দিন জহুরী

আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আকাশ-সংস্কৃতি কি ঘটাচ্ছে? শিরোনামের দিকে নজর দিলে তাই মনে হয় ।
নৈতিকতাভিত্তিক যে চরিত্র গঠনের আবেদন আমরা জানাই, যে আন্দোলন করি, যে অনুশীলন আমরা সাধ্যমত করছি, এই চরিত্রের সঙ্গে আকাশ সংস্কৃতি কি সাংঘর্ষিক, না সহযোগী, আগে এ প্রশ্নের একটা উত্তর আমাদের জানা দরকার।
প্রধানত তিন ধরনের চরিত্র হয়ে থাকে প্রথম শ্রেণীর চরিত্র ভাঙতে পারে কোন ঝড়ো হাওয়ায় বা দুর্ঘটনায়, কিন্তু কখন্হোনংঢ়; মচকাবে না, নত হবে না। আঘাতে আঘাতে তাদের জীবন গর্জে উঠে প্রতিনিয়ত কখনো কখনো হতাশাও আসে কিন্তু কোন সময় ম্রিয়মান হয় না। দ্বিতীয় শ্রেণীর চরিত্র হাফটাইট হাফ ঢিলা, এ চরিত্রকে মুনাফিক চরিত্র বলা যায়। তাদের চরিত্রের কাঁটা এদিকেও আছে ওদিকেও আছে যেদিকে হাওয়া সেদিকে তারা রূপকথার মৎস্যকন্যা (গধৎসধরফ) বলতে পারেন, মাছ ও নারীর ভাগাভাগি দেহ।
তিন নম্বরের চরিত্র প্রথম চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথম চরিত্রের এ মানুষ যাকে অনৈতিকতা বলে, ওরা তাকেই নৈতিকতা বলে যা প্রথম শ্রেণীর কাছে অপসংস্কৃতি ওটাকেই নৈতিকতা বলে, যা প্রথম শ্রেণীর কাছে অপসংস্কৃতি ওটাই ওদের কাছে সংস্কৃতি।্হনংঢ়; আকাশ-সংস্কৃতির সাথে শেষোক্ত দলের সখ্যতা, মিল মহব্বত অত্যন্ত প্রগাঢ়।
সুতরাং বলা যায় আকাশ সংস্কৃতি প্রথম শ্রেণীর চরিত্রবানের জন্য সর্বক্ষণের ঘর্ষণ পাথর কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর চরিত্রের জন্য সর্বক্ষণের উদ্দীপনা বিশেষ। তাদের ক্ষয় হওয়ার মত কিছু নেই আকাশ-সংস্কৃতি যা তাদের দেয় তারা মনে করে ‘বিনোদন’। এই তিন শ্রেণীর চরিত্রকে সামনে রেখে আকাশ- সংস্কৃতির আলোচনা করা যায়।
আকাশ সংস্কৃতি কি? আকাশের তো কোন সংস্কৃতি পয়দা হয় না। তবে হ্যাঁ আকাশ পথে সব সংস্কৃতির বেসাতি চলে, আমদানি-রপ্তানি হয় ক্রয়-বিক্রয় হয় তাই টোটাল সওদাকে আমরা বলতে পারি আকশ- সংস্কৃতি। আপনি আমি এটাকে সংস্কৃতি বলি আর নাই বলি, বাজারে এটাই সংস্কৃতি নামে পরিচিত। আকাশ থেকে এ পর্যন্ত একটি তারকাও খসে পড়েনি, তবুও সিনেমা জগতে, ফুটবল জগতে, ক্রিকেট জগতে অর্থাৎ খেলার জগতে এমনকি পরীক্ষার ফলাফল সীটে হাজার হাজার তারকার ভীড়। এসবের কোন কোনটির পিছনেও আকাশ-সংস্কৃতির ভূমিকা রয়েছে। আজকাল তো অনেক স্টার বা তারকা হিসেবে শুধু থাকতে চান না, মেগাস্টার হওয়ার কসরৎ করে যাচ্ছেন, কেউ কেউ হয়েও গেছেন ইতোমধ্যে।
আকাশ-সংস্কৃতির কারবারটা জানতে হলে কি আকাশ ঘুরে আসতে হয়? সরেজমিনে চাক্ষুষভাবে তদন্ত করে দেখার জন্য কি আকাশে যেতে হবে? না তা সম্ভব নয়। সাত আসমান প্রথম আসমানের ঠিকানাও জানি না। যদিও আকাশের ঠিকানায় চিঠি দেয়ার গানের সুরে ভেসে আসে কখনো কখনো কানে। আকাশের ঠিকানা আমরা জানি না, বিজ্ঞানীরাও জানে না। নোবেল বিজয়ী ড. আবদুস সালাম এক প্রশ্নের উত্তরে তাই বলেছিলেন। যা হোক, আকাশের ঠিকানা জানা না জানার প্রশ্ন পরের কথা দুনিয়া থেকে যদি আখেরাতের সওদা আহরণ করা যায়, তাহলে জমিনে বাস করে আকাশের খবর কেন জানা যাবে না? আকাশের আলোচনায় আসার আগে দুনিয়ার কিছু খবরাখবর আমাদের জানা দরকার। আকাশে উড়াল দেয়ার জন্য যে যানই আমরা ব্যবহার করে থাকি না কেন, রানওয়ে তো থাকতে হবে। এই রানওয়ে কোথায়? তাও আমরা জানি না। তাছাড়া দুনিয়ার কিছু কথা আছে। আকাশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আগে আমাদের নিয়্যাত ও আত্মপরিচয় কি সে সম্পর্কে কিছু বলার ও জানার আছে। আল্লাহপাক আমাদের কেন দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তা জানা থাকা দরকার। এসব না জানলে, মনোবল সেভাবে গড়তে না পারলে এবং আকাশ শত্র“দের সঙ্গে লড়াই করার ঈমানী হিম্মত নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করতে না পারলে আকাশ সংস্কৃতির ভাইরাসরা আমাদের চারদিকে ঘিরে ফেলবে। এখনই ঘেরাও এর মধ্যে আছি। এজন্য দুনিয়াতে আমাদের আগমন ও জিন্দেগীযাপন আর প্রস্থান সম্পর্কে যৎকিঞ্চিত জেনে নেই। নিজেকে চিনলে, নিজেকে জানলে আল্লাহকে চেনা যায়, জানা যায়। অতঃর্পহনংঢ়; দেখা যাবে আকাশের ঠিকানা পাওয়া যাবে কিনা, আগে দুনিয়া, আগে আত্মপরিচয় অতঃপর আকাশের ঠিকানা ও আকাশ সংস্কৃতি। লড়াইয়ের সীমানা ও ভিত্তি তো দুনিয়ার জমিন।
মাটি ও পানির দুনিয়ার ওপরে আছে আকাশ মহাকাশ। পৃথিবী নামক গ্রহের অবস্থাই তো আকাশে; মহাশূন্যে, মহাকাশে। আমরা দুনিয়াতে বাস করি। এই দুনিয়াতে আমাদের প্রেরণ কি স্রষ্টার নিছক খেয়ালমাত্র? না তা নয়। খেলাচ্ছলে বা নিছক খেয়ালে আল্লাহ কিছুই করেন না, যদিও একক ক্ষমতা শুধু তারই আছে, হও বললেই হয়ে যায়, সেট্হানংঢ়; ধ্বংসের ক্ষেত্রেই হোক বা সৃষ্টির ক্ষেত্রেই হোক। এমন শক্তিধর সর্বশক্তিমান যিনি, তার তো খলিফা প্রেরণের প্রয়োজন নেই, তবুও তিনি মানবজাতিকে তার খলিফা হিসেবে প্রেরণ করেছেন মানবজার্তিহনংঢ়; মধ্যে জবাবদিহিতা এবং প্রশাসনিক একটা সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য। খলিফার্দেহনংঢ়; কেন সৃষ্টি করেছেন? তার সাফ কথা, জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি আমার এবাদতের জন্য। এবাদত কি? এবাদত হচ্ছে এই, আল্লাহর আদেশ- নিষেধ মেনে তার দেয়া জীবন বিধান অনুয়ায়ী জীবনযাপন করা। কিভাবে জীবনযাপন করতে হবে এজন্য কওমের কাছে প্রতি জনপদে। অনেকে তার আদেশ নিষেধ শুনছে আবার অনেকে শুনেনি। প্রেরিত গাইডকে নির্যাতিত করেছে, গাইড বুকও ধ্বংস করেছে। তাই তাদের এখন নৈতিক কোন বোধই নেই। যা ছিল তা অবক্ষয়ে অবক্ষয়ে শেষ গেছে। যে নৈতিকবোধ তারা নানাভাবে প্রর্দশন করে নিজেদের নীতিবান বলে বিশ্ববাসীর কাছে জাহির করছে, তা কৃত্রিম, নিজেদের মনগড়া নৈতিকতা। তারা-কাপড় পরিধান করেও থাকে দিগম্বর। সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড় পরিধান করে বটে, সুন্দর সুন্দর সংলাপে শ্রোতাকে তারা মুগ্ধ করেও। কারণ নৈতিকতার কুদরতী সীমানা আর মানুষের তৈরি সীমানার মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। কুদরতী হুকুমেরু কোন তোয়াক্কা তারা করেনি। ফলে শয়তানের সঙ্গে মিতালী করে এমন এক নৈতিকতা সৃষ্টি করে রেখেছে, যা অনৈতিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। নানা দিকে অবক্ষয়ের ঢল ও ধস। এমন এক পর্যায়ে অবক্ষয়ের সর্বশেষ স্তরে এবং সময়ের এই সন্ধিক্ষণে রাসূলে করীম (সা:) এর আবির্ভাব ঘটে। তার মূল মিশন কি ছিল এ সম্পর্কে নানা জনের নানা কথা আছে এবং থাকতে পারে। ব্যাখাও নানা প্রকার। তাৎক্ষনিকভাবে যদি কয়েকজন ঈমানদারদেরকে আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করা যায় যে, রাসুলে করিম (সা)- এর কি মিশন ছিল এ দুনিয়াতে আগমনের? একজন বলবেন তাওহীদ ও রেসালাতের প্রতিষ্ঠা, আর একজন বলবেন নকল ইলাহদের উৎখাত করে এক আল্লাহর ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠা, আর একজন বলবেন গোমরাহির রাস্তা থেকে মানবজাতিকে সৎপথে আনা, অন্যজন বলবেন লক্ষ্যহীন ঠিকানাবিহীন এবং বিগত নবী রাসুলদের শিক্ষা আদর্শকে ভুলে যাওয়া মানবজাতির বংশধরদের বিস্মৃত সবক স্মরণ করিয়ে দেয়া আর সে শিক্ষা ও আদর্শের নবতর নিয়ামতকে বরণ করার তাগিদ দেয়া, উৎসাহিত করা ও সহায়তা করা, কেউ বলবেন সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় নেমেছিল তা প্রতিহত বা রোধ করে সংস্কতিবান মিল্লাত গঠনের জন্য মহানবী (সা)
এর আবির্ভাব ঘটেছিল। তার মিশনের অন্যতম কর্মসূচি ছিল একটি সংস্কৃতিবান জাতি গঠন করা। আমি মনে করি সকলের সকল কথা আসলে এক কথা। সকলের সকল কথার মর্মকথা একই। শব্দের পার্থক্য, বাক্যের পার্থক্য, ব্যাখ্যার পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সবই তাওহীদ ও রেসালাতভিত্তিক।
এজন্য যখন শুনি ‘নৈতিক মূল্যবোধর অবক্ষয়’ এই তিনটি শব্দের বাক্য, তখন চৌহাদ্দি ঠিক করে নিতে আমার কষ্ট হয়, প্রায় ক্ষেত্রেই চৌহাদ্দি ঠিক করতে পারি না। যখন কোন মোমিন মুসলমানের কন্ঠ থেকে একথা শুনি বা কলম থেকে নির্গত বাক্য পড়ি এবং জানি যে তিনি
চাপাবাজ মুসলমান নন, আমলী মুসলমান, তখন চৌহাদ্দি নির্ণয়ে ভুল হয় না। তিনি কি বলতে চান, এবং বুঝাতে চান, স্পষ্ট বুঝা যায়। একই কথা যদি একজন নাস্তিক, সেক্যুলারিস্ট, মুরতাদ এমনকি মুনাফিক মুসলমানের কন্ঠ থেকে উচ্চারিত হয় বা কলম থেকে নির্গত হয়, তখন বুঝতে আর বাকি থাকে না তাদের এই উক্তির লক্ষ্য কি। কথা একই কিন্তু লক্ষ্য ভিন্ন। কথায় বলে ডাক্তারের ছুরি কাঁচি রোগীর রক্ষার বা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় আর হাইজ্যাকার আর পকেটমারের কাঁচি হাইজ্যাক আর পকেটমারার কাজে ব্যবহার করা হয়। পুলিশের বন্দুক ও পিস্তল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আর সন্ত্রাসীদের হাতের বন্দুক ও পিস্তল খুন ডাকাতি ও হাঙ্গামা সৃষ্টিতে সহায়ক হয়। আসল কথা, ব্যবহারের নিয়্যাত তথা লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিভিন্নতা। সুতরাং বলা যায় নাস্তিক, মুরতাদ আর সেক্যুলারিস্টদের ‘মূল্যবোধ, নৈতিকতা আর অবক্ষয়ের’ সংজ্ঞা ব্যাখ্যার সঙ্গে তাওহীদে বিশ্বাসীদের সংজ্ঞা ব্যাখ্যার মিল নেই। এই তো সেদিন এক নাস্তিক (মুসলিম নামযুক্ত) বন্যার ওপর মন্তব্য করতে বলায় তিনি বললেন ভয়াবহ ক্ষতিকর তার চেয়ে মৌলবাদীরা অর্থাৎ ইসলামপন্থীরা আরো ভয়াবহ ও ক্ষতিকর। বন্যার পানির চেয়ে তারা বেশি। এমন ব্যক্তির নৈতিক্হনংঢ়; মূল্যবোধ কি আর অবক্ষয়ই বা কি সে সম্পর্কে জানা বুঝার বাকি থাকেনা। কোন পথে চললে কোন ঠিকানায় আমাকে পৌঁছাবে, কোন পথের বাঁকে বাঁকে এবং মোড়ে মোড়ে কে কে আছে এবং কেন আছে তাও জানা হয়ে গেছে। অতএব নাস্তিকের নৈতিকতা ও
সংস্কৃতি আমার জন্য অনৈতিকতা ও অপসংস্কৃতি হওয়ার সেন্ট পার্সেন্ট আশংকা। এজন্য নাস্তিক আর সেকুলারিস্টরা যখন বলে ‘অনৈতিকতা ও অপসংস্কৃতি মোকাবেলা করতে হবে’,
তখন আপনাকে আমাকে বুঝতে হবে তারা ইসলামপন্থী অর্থাৎ তওহীদপন্থীদের মোকাবিলার কথাই বলছে এবং সেই সতর্ক বাণী উচ্চারণ করছে। আলোচনার মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে ঘাটে ঘাটে যেসব বাঁধা আছে তা এক এক করে ডিংগাতে বা অতিক্রম করতে হবে। বধা এবং ভুলবোঝাবুঝির আরো কয়েকটি ধাপ বা ঝোপ ঝোপ জঙ্গল সাফ করতে হবে, তবেই না আলোচনার মূল অঙ্গন নজরে পড়বে। আগেই বলেছি, আকাশ-সংস্কৃতি জানার জন্য যদি আকাশে উড়তেই হয়, তাহলে আকাশে উড়ার জন্য জমিনে যে রানওয়ে আছে তা কোথায় আমাদের জানতে হবে। ‘আকাশ সংস্কৃতি’ খুব লম্বা চরড়া বিষয় নয়, তবে এর আগে অথৈ আকাশ সংস্কৃতির সঙ্গে লড়াইয়ের আগে জেনে নিতে হবে আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুুত কি না, আমরা যে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করবো তা লড়াই উপযোগী কিনা আর এ লড়াইয়ের ব্যাপারে আমাদের ধ্যান ধারনা পরিস্কার কিনা, তা জানা দরকার, বুঝা দরকার। ধারণাটা পরিস্কার করা হয় না বলে আমাদের অনেক আবেগী লোক জোশও জেদের বশবর্তী হয়ে পাল্টা কিছু করতে চান এবং কিছু কিছু করেও দেখেছেন, না ওকুল পেয়েছে না একুল পেয়েছেন। কিছুই পাওয়া যায় নি। ওরা ফ্যাশন শো করে, আমরাও করে দেখিনা আমাদের মত করে। করে দেখা গেল বাজার পাওয়া গেল না।
মহিলাদের রূপ প্রদর্শনই যখন ইসলামে নিষিদ্ধ, তখন ফ্যাশন দেশটায় কিভাবে বাজার পায়? নিতান্ত সাংঘর্ষিক। ফ্যাশন শো ইসলাম বিলাসিতা মনে করে, তাও আবার নারীর ফ্যাশন, মানে পুরুষকে প্রদর্শন। এভাবে উদাহরণ দিলে অনেক দেয়া যায়। মিসরে একবার জামাল আব্দুল নাসেরের সময় ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ নামে নৃত্য সৃষ্টি করা যায় কিনা এমন এক কসরত শুরু হয়েছিল, কিন্তু শুরুতেই এ প্রচেষ্টা শেষ হয়। সন্ত্রাসের পাল্টা সন্ত্রাস, বোমাবাজির পরিবর্তে বোমাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ আর খুনের বদলা ছিনতাই অপহরণ আর খুন, গালির বদলে গালি, ইসলামী তা কখনও সমর্থন করে না। যেহেতু ইসলাম সমর্থন করে না তাই আমি আপনিও করি না। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ন্যায়ের অস্ত্র বহুমুখী ব্যবহারের এস্তেমাল ইসলাম সমর্থন করে। এতটুকুই শুধু বলা যায়, এর অধিক বলার বা ব্যাখ্যার অবকাশ এখানে নেই। ক্রুসেডের ডাক দিলেও আমরা জিহাদের ডাক দিতে পারছি না নানাবিধ কারণে। কৃষ্টি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্ন ধারণা, অস্পষ্টতা আর ভুল বোঝাবুঝি প্রচুর। কয়েকটি উদাহারণ আগে দিয়েছি। ওদের এই আছে, হরেক রকম সংস্কৃতির উপকরণ আছে, তাদের মুকাবিলা আমাদের কিছু থাকা দরকার। বিশ্বাস করুন এমন প্রশ্নও কোন এক অতি আবেগী মুসলমান আমাকে করেছেন। যাকে যেমন বুঝ দেয়া তাকে তেমন বুঝ দিয়েছি। কিন্তু কোন এক নাছোড়বান্দাকে চোখ বুঝে জবাব দিলাম, ওদের সমাজে জারজ সন্তান কিলবিল করছে, লাখ লাখ সমকামীদের উৎপাদন চাই? সেই কালচারের পৃষ্ঠপোষকতা চাই? প্রশ্নকর্তা চুপ হয়ে গেলেন উচ্চস্বরে লাহাওলাও উচ্চারণ করলেন। অন্যের বাবা দেখতে যত সুন্দর হোক তাকে আমি বাবা বলি না সাফ বিভাজন। আমার সংস্কৃতি আমার অন্যেও নয় আমার ঈমানের বলয়ের বিপরীত বলয়ের সংস্কৃতি কখনো আমার নয়। তাই সংক্ষেত্রে হলেও কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যে ক্লাস্টার বোমা পড়বে, তা রুখতে পারবো না। আমি এখানে আমার ঈমানী বলয়ের বিপরীত বলয়ের বিশ্ববরেণ্য কোন কোন মনীষী বা পণ্ডিতের সংজ্ঞা ব্যাখ্যার উদ্ধৃতি দিচ্ছি না। এ কারণ্হেনংঢ়; দিচ্ছি না যে রসুনের সব কোষের এই মিলন স্থান একই স্থানে। আমার কৃষ্টি বা কালচার বা সংস্কৃতি কি বুঝে তারা? যাদের ঈমান আমল তাতে নেই। মুুরিস বুকাহলী দরবেশ বাদশাহ ফয়সালকে জানিয়ে ছিলেন আমি ইতিবাচক নিয়তেই বলিছ ইসলামের ওপর গবেষণা করবো।
্হনংঢ়;স্বল্পভাষী বাদশাহ ফয়সাল স্মিথ হাসি দিয়ে বলেছিলেন খুব ভাল, তাই যদি করতে চান তাহলে আগে পবিত্র কুরআনকে কুরআনের ভাষায় পাঠ করতে শিখুন অর্থ বুঝুন আরবি ভাষা শিখুন। মুরিস বুকাইলী সে উপদেশ মত পবিত্র কুরআন স্টাডি করেছিলেন এবং ইসলামকে বুঝেছিলেন। এরই ফলে অমর কয়েকটি গ্রন্থ বিশ্ববাসীকে উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সুতরাং সে পর্যায়ে কোন মনীষী যদি আমাদের ঈমানের সীমানায় এসে কালচার সংস্কৃতির সংজ্ঞা দেন, তাহলে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করা যায় । ডঃ আহমদ শরীফও বহু মন্দ কথার ফাঁকে ফাঁকে দু‘দশটা ভাল কথাও বলেছেন, কিন্তু আমরা তার ভাল কথাকেও গ্রহণ করতে পারি না, তাতে কোন না কোন ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়ে যায়। মূলের সাথে নিবিড় সংযুক্তি না থাকলে দু’দশটা মূল্যবান কথারও কোন মূল্য থাকে না, মূল্যবান কথারও কোন মূল্যয়ান হয়না। যাহোক, নিজেদের পরিচয়ের স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তাহলে আকাশ-সংস্কৃতির কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ তা বাছাই করা যাবে। আপনার আমার কাছে যদি ঈমানের চালনী না থাকে, ঈমানের নজর না থাকে, ঈমানের মনটা না থাকে তাহলে আকাশ-সংস্কৃতির ভালমন্দ কিছুই পরখ করা যাবে না। যে দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি প্রবল সে দেহে সহজে কোন রোগজীবাণু প্রবেশ করতে পারে না। আকাশ-সংস্কৃতির যত ভয়ঙ্কর ভাইরাস আছে, এসব সংস্কৃতির অনিষ্টকারিতার প্রতিরোধে আমাদের সংস্কৃতি অক্ষম, যদি নিজস্ব সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধনে সে চেষ্টা সাধনা না থাকে। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, কালচার আর সংস্কৃতি এক নয়, যা কালচার তা সংস্কৃতি নাও হতে পারে। হাঁটার কালচার নরেন্দ্র মিত্রের আর আব্দুর রহীমের এক কিন্তু দু’জনের প্রার্থনা ও এবাদতের কালচার ও সংস্কৃতি এক নয়।
দু’জনের পথ চলার কালচার এক, পা ফেলেছেন এক নিয়মে তারপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, সন্ধ্যায় আযানের ধ্বনি ভেসে আসলো, মন্দিরেও ফাঁসার ঘন্টা বাজলো । নরেন্দ্র মিত্র বামের রাস্তায় গিয়ে ঢুকলেন মন্দিরে আর আব্দুর গিয়ে ডানের রাস্তায় একটু আগ বাড়িয়ে ঢুকলেন মসজিদে। এতক্ষন দু’জনের হাঁটার কালচার এক হলেও প্রার্থনা ও এবাদতের ক্ষেত্রে দুজনের কালচার ও সংস্কৃতির রুপান্তর ঘটে। মুসলমানের সব কালচার ও সংস্কৃতির প্রভাব থাকে। ধান থেকে চাল, চাল থেকে ভাত তৈরির কালচার সকলেরই এক, এমনকি খেতে বসেও একভাবে, কিন্তু মুসলমান খাবার মুখে নেয়ার সময়্হনংঢ়; বিসমিল্লাহ বলে, সামনে আহার্য বস্তু মনে করে রাজ্জাকের দেয়া রিজিক, নিয়ামত। এগ্রিকালচারের দ্বারা উৎপাদিত ফসল সকল ধর্মের লোকের কাছে আসে একইভাবে কিন্তু ভোগের বেলায় ভোগ হয়ে যায় সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত। এক কথায় মুসলমানরা সকল কালচারকে তাদের ঈমানী সংস্কারের আগুনে কালচারে যা খাদ থাকে তা পুড়ে ছাই হয়ে যায় যা থাকে তা ঈমানী কষ্টিপাথরে বাছাই করে যা গ্রহণ করে থাকে তা মুসলসমানদের সংস্কৃতি। সকল ধর্ম যেমন এক নয়, সকল ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতিও এ নয়। প্রত্যেক ধর্মাম্বলবীদের কাছে সংস্কৃতি নির্ণয়ের কষ্টিপাথরও নেই। আর নেই বলেই যা চকমক করে ঝকমক করে, তাকেই সংস্কৃতির সোনা বলে, যেমন
আচার্য কিছু দেখলেই পূজাই লেগে যায়, গাছ, বাঁশ, সাপ, পাথর, সূর্যকে এমনকি বট গাছকেও অলৌকিকতায় মণ্ডিত করে পূজা করে। বর্তমানে আকাশ-সংস্কৃতির বড্ড জোর। বিশ্বের প্রত্যেক দেশ এই সংস্কৃতির হাওয়ায় ভাসছে। তরুণরা আবেগে থরথর করে কাঁপছে। আকাশ-সংস্কৃতির সওদা সিডি ও ক্যাসেট আকারে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দোকানে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে এসব সওদার মূল্য অতি কম কিন্তু মুগ্ধ করার, সম্মোহিত করার আছর থাকে বেশি। ঘরে ঘরে টিভি ও অন্যান্য যন্ত্র প্রবেশ করছে। পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন চ্যানেলের নাম প্রোগ্রাম রোজ ছাপা হয়। দিনরাতের প্রতিটি মুহূর্তে চিত্তক বিনোদিত করার ব্যবস্থা আছে। বিনোদনের কি আইটেম আপনার চাই? হাতের কাছে রিমোট কন্ট্রোল মেশিন আছে। বোতাম টিপতে থাকুন একটার পর একটা। তাতে ভালও পাবেন মন্দও পাবেন। ভালমন্দ সংজ্ঞার ব্যাখ্যা আপনার কাছে। দিগম্বর নৃত্য থেকে শুরু করে যা চাইবেন পাবেন। পবিত্র কুরআন তেলয়াত শুনে যদি রাত শেষ করতে চান তাও মজুদ আছে। আপনার রুচি অভিরুচি আপনার কাছে। যীনা শব্দ উচ্চারণ করলে শব্দটি যেভাবে আপনার আমার সামনে পূর্ণ অবয়বে আসে, তাই যথেষ্ট, ব্যাখ্যায় গেলে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতেক্যটা শব্দের মধ্যেই ব্যাখ্যা লুকিয়ে আছে। অনেক শব্দের ব্যাখ্যা করা যায় না। যেমন করে লুটেছে তা কুৎসিত। তেমনিভাবে পশ্চিমাদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে সংস্কৃতি নামের বিভিন্ন অপসংস্কৃতি তৈরি করে বিশ্বময় রপ্তানি, করছে কেউ কেউ আমদানিও করছেন। যত অশ্লীলতা আছে কুৎসিতদের জন্য কুৎসিত বিনোদন আছে সবই সরবরাহ করছে সরকারি এবং সিডিত্হেনংঢ়; বন্দি করেও। অনিবার্য কারণে আমি এসবের ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। ব্যাখ্যা করতে গেলে রঙ, রস পদ্ধতি প্রত্রিয়ারও ব্যাখ্যা করতে হয় তা কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ইফসুফ (আ) এর পিছন দিক থেকে মহিলা জামা টেনে ধরেছিল। পবিত্র কুরআন এতটুকু বলেছে। ব্যাখ্যায় যায়নি। আক্কেলমন্দরা মহিলার মটিভ বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি।
পশ্চিমাদের ফ্যাক্টরীগুলেতে আকাশ সংস্কৃতি বিভিন্ন আইটেম তৈরি করে। গত্হনংঢ়; শতাব্দীর আশির দশকে যখন লাতিন আমেরিকার ওপর চাপিয়ে দিয়ে একসপেরিমেন্ট করে তখন লাতিন আমেরিকার প্রত্যেক দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছিল, কিন্তু তাদের কাছে সংস্কৃতি যাচাই বাছাইয়ের যন্ত্র না থাকায় এক পর্যায়ে উত্তেজনা থেমে যায়। ঠান্ডা হয়ে যায়, এখন লাতিন আমেরিকা খুশির বন্যায় সাতাঁর কাটছে। আমাদেও দেশেও যখন পশ্চিমা অপসংস্কৃতির এ বন্যার গলিজ পানি ঢুকতে থাকে তখন দেখা গেল শহর বন্দরের প্রত্যেক অলিগলিতে ভিডিও ক্লাব ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়েছে। বেশকিছু দিন ধরে পাকড়াও চললো তারপর কি যেন একটা সমঝোতা হয়ে গেল। এখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে রাতের কোন প্রহরে কি দেখা যায় বোতামে টিপ দেয়ামাত্র। সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই দেশের যুবসমাজ ও কিশোর কিশোরীরা উৎসন্নে যাচ্ছে, কিছু একটা করা দরকার। আপত্তিকর পরিবেশনায় বদঅভ্যস্ত চ্যানেলগুলো বন্ধের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যেন প্রেসার গ্র“প প্রেসার দিয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণের মানসিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে।
ভারতের চ্যানেলে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখায় না। ভারতের আকাশ বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর জন্য বন্ধ অথচ ভারতের কোন কোন চ্যানেলের একটি নাটকও কখন সম্প্রচাণ করা হবে তা বাংলাদেশে সময়সহ বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হয়।
আকাশ সংস্কৃতি আমাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটাচ্ছে কিভাবে ব্যাখ্যার বোধহয় কোন প্রয়োজন নেই। নগ্নতা যৌনতা ছাড়া তো তাদের কাছে কিছুই নেই। এই দুয়ের প্রমাণ তো যতভাবে পারে ঘটাচ্ছে তারা তত আকাশের বাজার দখল করতে সক্ষম হয়েছে। আমি ইচ্ছা করেই এই বর্ণনায় গেলাম না। অপসংস্কৃতির প্লাবনের মধ্যেও কোন কোন মুসলিম দেশ সেন্সর করে আকাশের এ সওদা গ্রহণ করে বা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ প্রত্যেক দেশের কাছে এই আর্ন্তজাতিক নেটওর্য়াকের লোকাল কন্ট্রোলিং ব্যবস্থা আছে। যা আপত্তিকর বলে মনে করা হবে তা প্রদর্শন করার হুকুম শক্তভাবে দেয়া যায়। ভারত যেমন কওে পারছে, যেমন করে ইরান ও সউদী আরব পারছে। আমরা কেন পারবো না?
নগ্নতা বিরুদ্ধে একটা ঘৃণাবোধ সৃষ্টির জাতীয় আন্দোলন অপরিহার্য। ছাত্র সমাজের মধ্যে এই জাগরণ যদি আসে তাহলে আন্দোলনটা সফল হয়। নৈতিক বোধ শক্তি শিক্ষা ও অনুশীলন ছাড়া এই ভাইরাস বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এই ভাইরাস প্রতিরোধে একটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।্হনংঢ়; সেটা হলো এই অপসংস্কৃতির কেউ মনে প্রাণে পছন্দ কওে না। আল্লাহর রাসূলের না পছন্দের আর পছন্দের দিকটি যতবেশি প্রচারে আসবে শিক্ষায় আসবে আমলে অনুশীলনে আসবে এই আসমানী বালা- মুসিবত থেকে বাঁচার ব্যবস্থা হবে, নতুবা পরিত্রাণ নেই। হ্যাঁ আশার কথা খুব দুর্বল হলেও বিপরীত একটা স্রোত একটা হাওয়া সৃষ্টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আশা শুধু এই আমাদের ইমানের তেজই আমাদের হেফাজত করতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন