রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষায় পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানী বন্ধ করা দরকার -মো: আশরাফ আলী

আমার দেশ আমার অহংকার। আমার সভ্যতা আমার অহংকার আর আমার সংস্কৃতি আমার বস্ত্র। এটাই হচ্ছে বাঙালী জাতির (আমাদের) মুখের বলি। কিন্তু আমরা যে অধিকারের বলে এ বুলি লালন করে আসছি, তা হচ্ছে স্বাধীনতা। আজ আমরা সেই স্বাধীনতাকে নিজেই হরণ করছি ধীরে ধীরে। যে স্বাধীনতার জন্য আমাদের ত্রিশ লক্ষ বাঙালী নিজেদের বুকের তাজা রক্ত বির্সজন দিয়ে স্বৈরাচারী পাক শাসক গোষ্ঠীর পরাধীনতার হাত থেকে স্বাধীনতার লাল সূর্যটিকে ছিনিয়ে আনতে একত্রিত হয়েছিল সর্বস্তরের জনগণ সেই দেশপ্রেম আজ আমাদের মধ্যে নেই। কারন যে সব বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সেমিনারে, স্বাধীনতার সর্বভৌমত্বের কথা বলে তারাই আবার নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে হাজার হাজার অর্থের বিনিময়ে ভিনদেশী নগ্নতাময় অশ্লীলতা পূর্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আপন করে নেয়ার মাধ্যমে আমাদের সুস্থ্য ধারার সংস্কৃতিকে জীবন্ত কবর দিচ্ছে ।

যেই মূহুর্ত্বে সরকার ইভটিজিং, ধষর্ণ, খুন, অপহরণ, প্রেমিকার পিতামাতাকে খুন, পরকীয়ার প্রেমের কারনে নিজ সন্তানকে খুনের মত জঘন্যতম অপরাধ নিয়ন্ত্রন করতে উৎকন্ঠায় রয়েছে, সেই মূর্হুতে গর্ত ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শাহরুখ খানের নোংরা নৃত্য প্রদর্শন করায় সর্বস্তরের জনগনের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে আর এর রেশ কাটতে না কাটতেই গর্ত ২৪ শে ফেব্র“য়ারী ভাষা আন্দোলনের মাসে অক্ষয় কুমার, সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফ কে দিয়ে হিন্দী গানের কর্নসাট করার মাধ্যমে আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার পাশাপাশি আমাদের যুব সমাজকে উত্তেজিত করে ইভটিজিং এর মত অপরাধ করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। যানাযায় কর্নসাট স্থলে অনেক মেয়ে ইভটিজিং এর শিকার হয়েছে , এ সংকান্ত একটি রির্পোট গর্ত ২৫শে ফেব্র“য়ারী পত্রিকায় ছাপানো হয়।

এ ধরনের অপসংস্কৃতি চর্চা  হিন্দুস্থানে  হতে পারে। কিন্তু ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এ ধরনের কর্নসাট দেশের ধর্মপ্রান জনগোষ্ঠীকে র্মমাহত করে যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল।  আমাদের দেশের মানুষ  ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন করেছিল, উর্দূর বিরুদ্ধে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার জন্য, হিন্দী শেখার জন্য নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি রাওয়াল পিন্ডির রাজমুক্ত হয়ে দিল্লীর অধীন হওয়ার জন্য নয়। আমাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার।

আমরা এতটাই বিদেশী সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছি যে,  আমাদের ড্রয়িংরুম থেকে শুরু করে শপিং মল গুলো পর্যন্ত ভিনদেশী সংস্কৃতির বাজারে পরিনত হয়েছে। এর উদাহরণ সরূপ বলা যায় দেশের অধিকাংশ বাসা বাড়িতে এখন বিদেশী টিভি চ্যানেলের নোংরা নাচ, গান ও ছবি দেখে। আমাদের দেশে বিদেশী টিভিচ্যানেল নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে উদাসীন হওয়ার কারনে  টিভির রিমোর্ট চাপলেই পশ্চিমা চ্যানেল গুলো দেখা যায়। এ অবস্থা  পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই। এর ফলে আমাদের ভাই বোনরা ছোট কাল থেকে পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। গর্ত ১৮ই মার্চ একুশে টিভির রাত ১১ টার সংবাদে সম্প্রচার হয় কিভাবে শিশুদের দ্বারা ঢাকার গুলিস্থান ও ফার্মগেট এলাকায় অবাদে  বিক্রি হচ্ছে বিদেশী পর্ণ ছবির ভিসিডি ও ডিভিডি। এটা দেখে মনে হয় আমাদের  দেশ  বিদেশী অপসংস্কৃতির জন্য এক অরক্ষিত চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশে অপসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজের চরিত্র হরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় বাঙালী সংস্কৃতি ও ধর্মীয়মূল্য বোধ বলে কিছু থাকবে না। অথচ আমাদের সংবিধানের ২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে য়ে, Ñরাষ্ট্র জনগনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগন জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহন করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন। 
তাই দেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে অনৈতিকতা সম্পন্ন কর্নসাটের অনুমোদন বন্ধ করার পাশাপশি বাঙালীর প্রকৃত সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য বিদেশী চ্যানেল গুলোর অবাধ সম্প্রচার বন্ধ করা দরকার।

লেখকঃ
শিক্ষার্থী আইন বিভাগ,
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ইনটারন্যাশনাল প্রোগ্রাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন