রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

আল কুরআনে রাসূল (সা) -সালেহ আল ইমতিয়াজ

    

বশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা) এর  পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য, তাঁর কর্মতৎপরতা, তাঁর চরিত্রমাধুর্য, আদর্শ, শ্রেষ্ঠত্ব্, মহানুভবতা, মানবকূলের প্রতি তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্ব এক কথায় তাঁর বর্ণিল জীবন নিয়ে আল্লাহ তায়ালা  আল কুরআনে বিস্তর আলোচনা  করেছেন।
রাসূল (সা) কে প্রেরণের প্রধান উদ্দেশ্য জগৎবাসীকে আল্লাহর পরিচয় ,বড়ত্ব, মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও আল্লাহর  বিধান মানুষকে জানিয়ে দেয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্য থেকে, তোমাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি, যে আমার আয়াত সমূহ তোমাদের কাছে তেলওয়াত করে, তোমাদের পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমরা যা জানতে না তাও শিক্ষা দেয়।’ (সূরা বাকারা : ১৫১)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, হে নবী! আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সর্তককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আহযাব: ৪৫-৪৬)। পৃথিবীর সমস্ত বাতিল ও মনগড়া ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের জন্য তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি আল্লাহ যিনি রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্যজীবন  ব্যবস্থা সহ পাঠিয়েছেন যেনো তিনি এ দ্বীনকে সমস্ত বাতিল ব্যবস্থাসমূহের ওপর বিজয়ী করেন।’(সূরা ফাতাহ : ২৮)। রাসূল (সা) ছিলেন সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী। রাসূলের (সা) চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ ( কলম:৪)। রাসূল (সা)- এর আদর্শই একমাত্র অনুকরনীয় ও অনুসরণীয়, অন্য সব আদর্শ ও মতবাদ বাতিল হিসেবে ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তায়ালা। আল কুরআনে বলা হয়েছে ,‘রাসূলের (সা) মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্র্শ রয়েছে।’(আহযাব:২১)।
আজ মুসলিদ জাতি নানা বিজাতীয় আদর্শ এবং ব্যক্তি-দল-গোষ্ঠীর মতবাদের খপ্পরে পড়ে আত্মবিস্মৃত হয়ে ইসলাম বিরোধী অপশক্তি দ্বারা চরমভাবে নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। ‘রাসূল (সা) সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ।’( আম্বিয়া:১০৭)। আমরা মুসলমানরা  রাসূলের রঙে রঞ্জিত না হওয়ায়, তাঁর আদর্শ ও তাঁর ওপর নাযিলকৃত কুরআন বাদ দিয়ে নিজ নিজ খেয়ালখুশি মতো চলার কারনে সেই রহমত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ফলে লাঞ্ছিত হচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। আল কুরআনের বাস্তবরূপ হচ্ছে রাসূল (সা)। রাসূলের (সা) পরিপূর্ণ অনুসরণই হচ্ছে আল্লাহর বিধান কুরআনের পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা। ‘কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহর আনুগত্য করলো।’(নিসা:৮০)। ‘তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের(সা)।’(নূর:৫৪)।
রাসূলের আনুগত্য করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ (অত্যাবশক)। আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল তোমাদের কে যা কিছু প্রদান করেন তা গ্রহন কর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেন  তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।’(হাশর:৭)।
‘রাসূল (সা) নিজ থেকে কোন মনগড়া কথা বলতেন না, যা বলতেন তা অহী দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে।’(নজম;৩-৪)। মোট কথা রাসূল (সা) এর অনুসরণ ব্যতীত কেউ মুসলমান হতে পারবেনা। সে কাফির হিসেবে গণ্য হবে। রাসূল (সা) এর মাধ্যমে রিসালাতের দায়িত্ব সমাপ্ত হয়েছে। তারপর অন্য কোনো নবী বা রাসূল এ পৃথিবীতে আসবেন না। তাঁর মাধ্যমেই ইসলামের পরিপূর্ণতা সাধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এরশাদ হচ্ছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। আর তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ অন্যত্র বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা) তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।’(আহযাব:৪)। বর্তমান সংঘাতপূর্ণ পৃথিবী ও বিপন্ন মানবতাকে বাঁচাতে, বিশেষ করে রক্তাক্ত ও অত্যাচারিত মুসলিম জনপদকে বাঁচাতে হলে রাসূল (সা)- এর চরিত্র ও আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ ব্যতীত কোনো পথ নেই। কারণ রাসূল (সা) অন্যান্য ধর্মীয় নেতা বা প্রচারকের মতো শুধু ধর্মপ্রচারক ছিলেন না, তিনি মানব জীবনের নৈতিক আধ্যত্মিক, চারিত্রিক, বৈষয়িক অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ের মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তিনি ঘর সংসার পরিচালনা থেকে শুরু করে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালনা কিভাবে করতে হয় তা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন। মানব জীবনের প্রতিটি জিজ্ঞাসা ও বিষয়ের পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে তাঁর মধ্যে। রাসূল (সা) বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন,আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, এ দুটি আকঁড়ে থাকলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব কুরআন, অপরটি আমার সুন্নাহ।’ অপরদিকে আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা কুরআনের কিছু অংশ গ্রহণ করবে এবং কিছু অংশ ত্যাগ করবে? যারা এমন করবে তাদের পরিণাম তো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা ও পরকালে কঠিন শাস্তি। (বাকারা:৮৫)। এক কথায় বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাসূলের (সা) মহান আদর্শকে দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তবেই আমাদের পার্থিব ও পরলৌকিক জীবনে মুক্তি সম্ভব। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা পোষণ কর তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’(ইমরান:৩১) আর রাসূল (সা) কে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে পার্থিব জীবনে যেমন রয়েছে লাঞ্ছনা, তেমনি আখেরাতের জীবনেও রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। আল কোরআনের ভাষায় বলতে হয়, ‘সেদিন (কেয়ামতের ময়দানে)
যালিমরা হাত কামড়াতে কামড়াতে বলবে হায় আফসোস! কতই না ভালো হতো যদি আমরা রাসূলের (স) অনুগত হয়ে তাঁর দেখানো পথে চলতাম।’ (সূরা ফুরকান;২৭) ‘হায় আফসোস! আমরা যদি আল্লাহর হুকুম মেনে চলতাম, হায় আমরা যতি তাঁর রাসূলের (স) অনুসরণ করতাম।’ (অুুুুাল আহযাব; ৬৬)।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন