রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবজাতি অসহায় লন্ডভন্ড জাপানই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ -সম্রাট নূর

 
বিশ্বের ইতিহাসে রেকর্ড করা ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সৃষ্ট সুনামির তান্ডবে লন্ডভন্ড  হয়ে গেছে সমগ্র জাপান। গত ১১ মার্চ শুক্রবার ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানী টোকিওসহ জাপানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কাঁপন অনুভব করা যায় দেড় হাজার মাইল দূরের বেইজিং থেকেও। এই প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর পরই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে ৩৩ ফুট উচ্চতার সুনামি। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই খড়কুটার মতো ভেসে যায় মানুষ, ঘরবাড়ি, যানবাহন, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি সবকিছু। প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্প এবং সুনামি এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম, বিজ্ঞান যাহার পূর্বাভাস দেওয়ার কার্যকর কোন পদ্ধতি এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন করিতে পারে নাই। এই জায়গায় মানবজাতি এখনো প্রকৃতির কাছে অসহায়। সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ভূমিকম্পের মত বিপর্যয় নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে ঘন ঘন। জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য ফল হিসাবে এটা দেখছেন বিজ্ঞানী সমাজ। পশ্চাতের কার্যকারণ যাহাই হোক না কেন, আজ জাপানে যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তার কোনো জবাব আমাদের কাছে নেই।
জাপানি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা যায়, সেদিন দুপুরে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সেন্দাই শহরের উপকূল থেকে উঠে আসা বিশাল ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, ঘর-বাড়ি, জলযান ও স্থলযান। দূর থেকে জলযানগুলো ডাঙায় এনে আছড়ে মারে। ফুকুশিমা, মিয়াগি, টোকিও, ইবারাকি, চিবা, কানাগাওয়া, টাকাহাগি ও টোচিগিতে ব্যাপক ক্ষয়কক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ৩০০ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করা একটি বুলেট ট্রেনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ১০০ মানুষকে নিয়ে একটি জাহাজ সুনামিতে ভেসে গেছে। সেই জাহাজের পরিণতি জানা যায়নি।
মিয়াগির ৭০ হাজার লোকের বাসস্থান কেসেনুমা শহরে ভূমিকম্পের পর বিরাট অংশে অগ্নিকা  ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটা ৪৬ মিনিটে পরপর ১২ বার ভূমিকম্পে কেঁেপ ওঠে রাজধানী টোকিও। এই প্রলয়ংকরি ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিলো টোকিওর ২৫০ মাইল দূরে ভূ-পৃষ্ঠের ২০ মাইল গভীরে। ভূমিকম্পের পরপরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলসহ মোট ৫৩টি দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।
ভূমিকম্পের তা বে দেশটির প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যায় । আহত হয় আরো বহু সহস্র নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ। কত পরিবার, কত মানুষ যে আশ্রয় হারাইয়াছেন, তাহার ইয়ত্তা নাই।
জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আরও ৫০টি ছোট ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া ৪৪ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়েছে।  সেখানে বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পে টোকিওসহ বহুসংখ্যক শহরের ভবনের ছাদ ধসে গেছে। বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে ২/৩ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। কিন্তু জাপানে গত ছয়দিনে প্রতি ১০/১৫ মিনিট পরপর ৩৫২ বার ভূমিকম্প হয়েছে।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জাপান আবার কেঁপে উঠেছে আরেকটি ভূমিকম্পে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিলো ৬। বুধবার সকালে রাজধানী টোকিওতে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। এতে শহে -কোঠা ভীষণভাবে দুলে উঠে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। তবে তাৎক্ষ রর দালান ণিকভাবে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি।
এর আগের ৫ শক্তিশালী ভূমিকম্প ঃ
জাপানে গত ১৪০ বৎসরের মধ্যে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প আর আঘাত হানে নাই। তবে, ২০০৪ সালে ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে প্রাণ হারান ১৪টি দেশের আড়াই লাখ মানুষ। ইহার আগে সুনামির বিপর্যয়ের কথা খুব একটা শোনা যায় নাই। তাহা না গেলেও, বিশ্বের ইতিহাসে ইহার আগে কমপক্ষে আরও ৫টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি জাপানের ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৫ বার। এখন হইতে ১৪৩ বৎসর আগে, ১৮৬৮ সালে ১৩ আগস্ট পেরুতে আঘাত হানিয়াছিল ৯ মাত্রার ভূমিকম্প। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে একই রকম শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানিয়াছিল রাশিয়ায়। ১৯৬০ সালের ২২ মার্চ চিলি ল ভ  হইয়া গিয়াছিল ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে। ১৯৬৪ সালে ৯ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। আর ২০০৪ সালের সুমাত্রা দ্বীপের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ১ রিখটার স্কেল।
এদিকে যে শহরে ভয়ে জাপানবাসী যেত না, সেই হিরোশিমা নাগাসাকিতে পালাচ্ছে জাপানিরা। জাপানের রাজধানী টোকিও এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ভয়ে টোকিও থেকে নগরবাসী অনেকেই ছুটে পালাচ্ছে যে যেখানে পারে। এমনকি অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপ আর ভয়াল মৃত্যুকূপে পরিণত সেই হিরোশিমা আর নাগাসাকি নগরীর দিকেও ছুটে চলেছেন নিকটাত্মীয় ও স্বজনের কাছে। তারা বলছেন, হিরোশিমা বা নাগাসাকিই বরং এখন নিরাপদ। এ সবের পর এখন নতুন কওে শুরু হয়েছে জাপানের নতুন দুর্ভোগ তুষারপাত। তুষারপাতে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছে জাপানের ভূমিকম্পবিধ্বস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল। তুষারের চাদরে ঢাকা পড়ে যায় চারদিক। তার মধ্যেও উদ্ধার কাজ চলছে।  তুষারপাত তাদের জন্য আরো বেশি দুর্ভোগ বয়ে এনেছে।
ঝুঁকি নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমেছেন জাপানি বিশেষজ্ঞরা
ভূমিকম্প এবং সুনামির পর পরমাণু কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া। এই দুর্যোগ জাপান কাটিয়ে উঠতে পারে কী না তা দেখার জন্য বিশ্ববাসী যখন তাকিয়ে আছে, তখন সেখানে বিশেষজ্ঞরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। জাপানের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং সুনামির পর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি চুলিস্নতে বিস্ফোরণ ঘটে।
বিপদের আশঙ্কা থাকলেও তাঁরা তাঁদের কাজ করে যাচ্ছেন। এমনিতেই জাপানিরা কাজের ব্যাপারে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে পিছপা হন না। এই কাজকে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব হিসেবেই দেখছেন।
বিপর্যস্ত জাপান ও পারমাণবিক সংকট
এক মহাদুর্যোগে বিপর্যস্ত পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান। জাপান আমাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন হতেই যাদের অবদান অপরিসীম, সেই দেশের নাগরিকগণ আজ বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। যেই দেশটি সর্বদা অন্য দেশের দুর্যোগে পাশে আসিয়া দাঁড়ায়, আজ সেই দেশটি দুর্গতদের জীবন রক্ষায় তাঁবু, কম্বল ও জীবন রক্ষাকারী উপকরণ সাহায্য দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাইয়াছে।
জাপানে স্মরণকালের ভয়াবহ যে ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে তাহার মাত্রা ছিল আসলে ৯.০। ১৮০০ সালের পর ইহাই জাপানের সর্বোচ্চ ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভূকম্পন।
প্রলয়ংকরী সুনামি জাপানে যে ধ্বংসলীলা ঘটিয়ে গেছে তা পুরণ হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। সেদিনের সুনামির ভিডিওচিত্র দেখলে যে কারো মনে হতে পারে ক্ষুব্ধ প্রকৃতি কোনো এক রহস্যময় কারণে নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নিয়েছে জাপানের মানুষ ও জনপদের উপর। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জাপানের বিখ্যাত চিত্রকর কাতসুশিকা হোকুসাই যেন কল্পনার চোখে এই ঘটনা দেখতে পেয়েছিলেন প্রায় ১৮০ বছর আগে! চিত্রকর হোকুসাই ১৮৩০ সালে কাঠ খোদাই করে একটি রঙ্গিন চিত্রকর্মে সাগরের জলরাশির ধ্বংসের সীমাহীন ক্ষমতা তুলে ধরেছিলেন। শিল্পী তার এই সৃষ্টির নাম দেন ‘দ্য গ্রেট ওয়েভ’। ১৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ১০ ইঞ্চি প্রস্তের এই চিত্রকর্মটি সংরক্ষিত আছে জাপানের হাকুনি যাদুঘরে।
‘দ্য গ্রেট ওয়েভ’ এতদিন ছিল কেবলই একটি চিত্রকর্ম। কিন্তু জাপানের সাম্প্রতিক সুনামির পর এটি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, হোকুসাই কি জাপানের উপর প্রকৃতির এই নিষ্ঠুরতা ১৮০ বছর আগেই দেখতে পেয়েছিলেন! এই চিত্রকর্মের মূল সুর হলো প্রকৃতির অসীম ক্ষমতার কাছে মানুষের অসহায়ত্ব। এতে দেখা যাচ্ছে, বিশাল ঢেউ ভয়ানক ফনা তুলে ধেয়ে আসছে। মানুষসহ ভাসমান নৌকাগুলোকে ঢেউ গিলে ফেলছে। অতিকায় ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র’ মানুষগুলোকে সাগরের বুকে ছুড়ে মারছে প্রকান্ড ঢেউ। দূরে ফুজি পাহাড় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ঢেউয়ে তুলনায় বিশাল পাহাড়কেও অতি ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। এর মাঝে ‘বুদ্ধিমান’ মানুষগুলো যেন ভাসমান বুদবুদের চেয়ে বড় কিছু নয়! জাপানের এই মহাদুর্যোগের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও জ্বালানি তেলের রফতানিকারক দেশসমূহে পড়তে পারে। সেখানকার বর্তমান পারমাণবিক সংকটে ব্যাহত হতে পারে এশিয়ার শিল্প উৎপাদন। জ্বালানি পরিকল্পনায় আসতে পারে পরিবর্তন। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পরমাণু শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। এছাড়া জাপান পরিস্থিতির কারণে ভারত ও চীন তাহাদের জ্বালানি পরিকল্পনায় রদবদল আনতে পারে। ভারত ২০৫০ সাল নাগাদ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে ২৫ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চীনে আরও ২৫টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ৫০টি আছে পরিকল্পনা পর্যায়ে।
ছবির মত সাজানো জাপানের শহরগুলো এখন জলাভূমি
ভয়াবহ বিধ্বংসী ভূমিকম্প-সুনামির তা বের পর অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জাপানের কয়েকটি শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষ। নেই পানীয় জল, বিদ্যুৎ। পেট ভরাতে হচ্ছে শুধু ন্যুডলস, চালের বড়া খেয়ে। তার উপর সর্বক্ষণ ফুজুশিমার পরমাণু চুলিস্নতে বিস্ফোরণের জেরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়ানোর আতঙ্ক। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভূকম্পনের জেরে জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলের সুন্দর, সাজানো ছবির মতো শহরগুলি কাদামাটি আর ইট-বালি-চুন-সুরকির ধ্বংসস্তূপে ভরা জলাজমিতে পরিণত হয়েছে। চোখে না দেখলে সেই ছবি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
ভূমিকম্প ও সুনামি থেকে বাঁচার উপায়
২০০৪ সালে সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার বান্দাজ আচেহ বিধ্বস্ত হয়েছিল। এবার জাপানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে বিধ্বস্ত হয়েছে দেশটি। সুনামি কি একের পর এক আঘাত হেনেই যাবে? একটা দেশকে কিভাবে সুনামিমুক্ত করা যাবে? প্রকৃতির কাছে মানুষ সত্যিই অসহায়। সুনামি জাপানের উপকূলীয় এলাকাগুলোকে ল ভ  করে দিয়েছে। যদিও জাপানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার নানা কৌশল আছে। কারণ এটি একটি উন্নত দেশ। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের ভূমিকম্প প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ড. তিজিয়ানা রোসেতো বলেন, ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কম হওয়ার মত যথেষ্ট পরিকল্পনা ঐ দেশটিতে রয়েছে। সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষার জন্য ভবনের নকশা, আগেভাগে সতর্ক সংকেত, জনগণের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি ও সরে যাওয়ার মত কৌশল ইত্যাদি সতর্কতা সেখানে রয়েছে। তবে তিনি হুঁশিয়ার করে দেন যে, সুনামি আঘাত হানতে কত সময় বাকি আছে এর ওপর নির্ভর করছে এ ধরনের সতর্কতা কতটা কাজে লাগানো যাবে। সময় যদি হাতে কম থাকে তাহলে এ ধরনের সতর্কতা ফলপ্রসু হবে না।
সুনামির মত ভয়াবহ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে মানুষ যত দ্রুত উচ্চভূমিতে সরে যেতে পারে ততই মঙ্গল। পানির নিচে ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের পানি ফুলে ফেঁপে অনেক উঁচুতে উঠে যাওয়ার ফলে এই সুনামির সৃষ্টি হয়।
মূল বিষয়গুলো হচ্ছে:
১. সুনামির ক্ষয়ক্ষতি থেকে পুরোপুরি প্রতিরক্ষা অসম্ভব।
২. তবে আগেভাগে জানার ফলে মানুষ সরে যেতে পারে এবং অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে।
৩. ভবনগুলো নির্মাণ করতে হবে এমনভাবে যাতে পানির তোড় থেকে রক্ষা পেতে পারে। অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক সতর্কতা পদ্ধতির অর্থ হচ্ছে আসন্ন সুনামি সম্পর্কে রেডিও টেলিভিশনে সম্প্রচার এবং লাউডস্পিকারে জনগণকে জানানো।
দুর্যোগ মুহূর্তে কী করতে হবে:
ভবনের অথবা বহুতলবিশিষ্ট কারপার্কের একেবারে শীর্ষতলায় উঠে যাওয়া। ভবনের প্রবেশ পথগুলো খুব চওড়া করা প্রয়োজন যাতে মানুষজন সহজেই লিফ্ট ব্যবহার করে দ্রুত উপরে উঠে যেতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল স্থপতি একটি নকশার ব্যাপারে পরীক্ষা চালান। গবেষকরা বলেন, দেখা গেছে ঢেউ প্রতিরোধ করার চেয়ে ঢেউগুলো অতিক্রম করতে দেয়া উচিত। এতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। নকশাটা এমন হবে যে, পর্যাপ্ত দরজা জানালা দিয়ে পানি বাইরে বের হয়ে যাবে। এই নকশার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবনকে সুরক্ষা দেয়া এবং পরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনকে সহজেই মেরামত করে নেয়া। বিধ্বস্ত দরজা, জানালা সহজেই ঠিক করে নেয়া যায়।
ড. চান্দলার বলেন, সুনামি থেকে ঝুঁকি মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে উপকূলের খুব নিকটে না থাকা। যেমন ১৯৪৬ ও ১৯৬০ সালে হাওয়াই শহর হিলোতে সুনামি আঘাত হানার পর কর্তৃপক্ষ তাদের অধিবাসীদের দূরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন